চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ হিসেবে পরিচিত সিআরবি এলাকায় শতবর্ষী গাছ কেটে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে সিআরবির পরিবর্তে চট্টগ্রাম নগরীর অন্য কোনো উপযুক্ত জায়গায় হাসপাতাল নির্মাণ করতে বলা হয়েছে।

বুধবার (১৪ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজীম এ নোটিশ পাঠান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রেলওয়ে সচিব, রেলওয়ের পরিচালক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে উচ্চ আদালতে রিট করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

আইনজীবী জানান, ব্রিটিশ আমলের চুন-সুরকির সিআরবি ভবনকে ঘিরে শতবর্ষী গাছগাছালি, পিচঢালা আঁকাবাঁকা রাস্তা, ছোট-বড় পাহাড়-টিলা আর নজরকাড়া বাংলোগুলো ঘিরে মন জুড়ানো এক প্রাকৃতিক পরিবেশ রয়েছে সিআরবিতে। নগরবাসী স্থানটিকে চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ বলে থাকেন। কিন্তু এখানে বড়সড় একটি হাসপাতাল নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করে সেই ‘ফুসফুস’ ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বাধা ও মতামত উপেক্ষা করে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে সিআরবিতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ নির্মাণের সব আয়োজন প্রায় চূড়ান্ত। ইতোমধ্যে ইউনাইটেড হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিও করেছে রেলওয়ে। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ রেলের সঙ্গে চুক্তি করার পর এখন হাসপাতাল নির্মাণের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ।

স্বর্গসম এ জায়গাটিতে হাসপাতাল হলে এখান থেকে বিতাড়িত হবে প্রকৃতির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণ, কাটা পড়বে গাছগাছালি, তৈরি হবে মেডিকেল বর্জ্য, গড়ে উঠবে দোকানপাট। এভাবে একবার বাণিজ্যিক আগ্রাসন শুরু হলে সেটি আর আটকানো যাবে না।

এই ধরনের হাসপাতাল করার মতো চট্টগ্রাম নগরীতে রেলওয়ের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কিছু জমি আছে প্রভাবশালীরা দখল করে আছেন। সেগুলো উদ্ধার করে হাসপাতাল করা যায় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যমান হাসপাতালের পাশে ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ, ৫০ আসনের নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতালটি আধুনিকায়ন করে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হবে। রেলওয়ে বলছে, বর্তমানে চট্টগ্রামে রেলের যে হাসপাতালটি আছে, সেটিসহ আশপাশের জায়গা মিলে ছয় একর জমি দেওয়া হয়েছে ইউনাইটেড গ্রুপকে। তাদের সঙ্গে ৫০ বছরের চুক্তি করেছে রেলওয়ে। চুক্তি অনুযায়ী, ইউনাইটেড গ্রুপ স্থাপনার নকশা প্রণয়ন, নির্মাণ অর্থায়ন ও পরিচালনা করবে। আর্থিক চুক্তিমতে পিপিপি ডেভেলপমেন্ট ফি হিসেবে রেলওয়েকে এককালীন দেওয়া হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা। আরও সাড়ে তিন কোটি টাকা দেওয়া হবে ভাগেভাগে। চুক্তি স্বাক্ষরের তিন বছর পর প্রথম বার্ষিক ফি হিসেবে ৭৫ লাখ টাকা, চতুর্থ বছরে ৭৫ লাখ টাকা, পঞ্চম ও ষষ্ঠ বছরে দেড় কোটি টাকা করে রেলওয়েকে দেবে ইউনাইটেড গ্রুপ। পরবর্তী সময়ে চুক্তির মেয়াদকাল পর্যন্ত অর্থাৎ ৫০ বছর ধরে তিন বছর পর পর ১০ শতাংশ হারে এই ফি বাড়বে।

চট্টগ্রামে বর্তমানে একটি সরকারি ও চারটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ আছে। এর বাইরে বেশ কয়েকটি বড় বেসরকারি হাসপাতাল আছে। আরও আছে ছোট-বড় বেশকিছু ক্লিনিক। সম্প্রতি নতুন করে গড়ে উঠেছে একাধিক বড় হাসপাতালও। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ইউনাইটেড হাসপাতাল। এদিকে হাসপাতালের নকশার অন্তর্গত জায়গায় থাকা রেল কর্মচারীদের বাসা থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ শ্রমিক-কর্মচারীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

পরিবেশবিদরা বলছেন, চট্টগ্রামে ঢাকার মতো রমনা পার্ক নেই, বোটানিক্যাল গার্ডেন নেই। গাছগাছালিতে আচ্ছাদিত নয়নাভিরাম এই উন্মুক্ত পরিসরটিই যদি না থাকে, মানুষ যাবে কোথায়! চট্টগ্রামে অনেক খালি জায়গা আছে, যেখানে হাসপাতাল করা যায়। যে কোনো মূল্যে সিআরবির প্রাকৃতিক পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে। 

এমএইচডি/জেডএস