দুর্নীতি অভিযোগে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা সরকার প্রত্যাহার করতে পারবে না বলে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের সিডিউলভুক্ত কোনো দুর্নীতির মামলা দেশের কোনো আদালত থেকে সরকার প্রত্যাহার করতে পারে না।

সরকার দুর্নীতির কোনো মামলা প্রত্যাহার করতে চাইলে আদালতে নয়, অনুরোধ জানিয়ে বা ইচ্ছা প্রকাশ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে আবেদন করতে হবে। আইন অনুযায়ী দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার করার একমাত্র ক্ষমতা দুর্নীতি দমন কমিশনের বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

রায় প্রদানকারী বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরের পর ১৫ পৃষ্ঠার এ পূর্ণাঙ্গ রায় বুধবার (১৩ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর দুর্নীতির অভিযোগে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা কোনো মামলা সরকার প্রত্যাহার করতে পারবে না বলে  রায় দেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছিলেন।

ওইদিন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এ রায়কে যুগান্তকারী অ্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, রায়ের মধ্যদিয়ে উচ্চ আদালত দুদকের মামলার বিষয়ে কোনো ধরনের নাক না গলানোর সর্তকবাতা দিয়েছেন। দুদকের মামলা সরকার চাইলেও যে প্রত্যাহারের সুপারিশ করতে পারবে না, এ নিয়ে হাইকোর্টের রায় এটাই প্রথম বলেও জানান তিনি।

ত্রাণের টিন আত্মসাতের অভিযোগে সুনামগঞ্জের বড়দল (উত্তর) ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যানসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৫ এপ্রিল তাহিরপুর থানায় করা মামলা করা হয়। ২০০৯ সালে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার পর তা বিচারের জন্য সিলেটের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে পাঠানো হয়।

অভিযোগ গঠনের পর সরকার মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ পিপিকে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট পিপি সরকারের সিদ্ধান্তপত্র যুক্ত করে আদালতে একই বছরের ৩ আগস্ট মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য আদালতে আবেদন জানান। সংশ্লিষ্ট আদালত মামলাটি প্রত্যাহার করে ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি আদেশ দেন।

ওই আদেশের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ আবেদনে হাইকোর্ট ওই আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এ রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১০ ডিসেম্বর রুল যথাযথ বলে রায় দেন হাইকোর্ট।

রায়ে আসামিদের চার সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এমএইচডি/এসএম