স্ত্রী হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট থানার আডুয়াদিঘী গ্রামের সাহেব আলী ফকিরকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আর কোনো মামলা না থাকলে তাকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তাকে কনডেম সেল থেকে সাধারণ সেলে নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বগুড়ার কাহালু থানার গোলাম রব্বানীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।  

রোববার (৮ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ পৃথকভাবে দুই মামলায় এ রায় দেন।

দুটি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম আমিনুল ইসলাম।

বাগেরহাটের সাহেব আলীর খালাস

বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট থানার আডুয়াদিঘী গ্রামের সাহেব আলী ফকিরের স্ত্রী শিউলী বেগমকে বিষ প্রয়োগে করে হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৮ নভেম্বর সাহেব আলী ও তার তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পুলিশ ওই দিনই সাহেব আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

এ মামলায় নিম্ন আদালত ২০১০ সালের ১৫ জুন এক রায়ে সাহেব আলী ফকিরকে মৃত্যুদণ্ড দেন। অপর তিন আসামিকে খালাস দেন আদালত। এরপর তার মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। আর আসামিও হাইকোর্টে আপিল করেন। উভয় আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৫ সালের ৫ জুলাই রায় দেন হাইকোর্ট। এরপর এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন কনডেম সেলে বন্দি সাহেব আলী। রোববার শুনানি শেষে আপিল বিভাগ তাকে খালাস দিয়ে রায় দেন।

ওই মামলার বাদী নিহতের পিতা আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছিলেন, পুলিশ তাকে মামলা করতে বাধ্য করেছে। আর আসামি ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকরোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেন, পুলিশ তাকে নির্যাতন করে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে। এছাড়া নিহতের ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্যাতনের কোনো চিহ্ন নেই। ভিকটিম আত্মহত্যা করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। এসব বিবেচনায় নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সাহেব আলীকে খালাস দেন।

ইনজেকশন দিয়ে বিষ প্রয়োগে স্ত্রীকে হত্যা

বগুড়ার কাহালু থানার কাহালু গ্রামের গোলাম রব্বানীর স্ত্রীর মৃত্যু হয় ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর। স্ত্রীকে সাপে কামড় দিয়েছে- একথা বলে ভিকটিমকে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ওঝা ক্ষতস্থান দেখে বলেন, এটা সাপের কামড় নয়। এরপর ভিকটিমকে তার বাপের বাড়ি ও পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। 

এ ঘটনার পরদিন ২৯ নভেম্বর কাহালু থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন গোলাম রব্বানী। কিন্তু ভিকটিমের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন ও কেমিক্যাল পরীক্ষায় ধরা পড়ে কার্বামেট নামক বিষ প্রয়োগে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ অবস্থায় নিহতের ভাই গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে আবেদন দাখিল করেন। আদালত এই আবেদন মামলার এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে থানাকে নির্দেশ দিলে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে এজাহার গ্রহণ করা হয়। এর আগে গোলাম রব্বানীর অপমৃত্যু মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এরপর ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি গোলাম রব্বানীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

এরপর বিচার শেষে নিম্ন আদালত ২০১০ সালের ২১ জুলাই গোলাম রব্বানীকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরবর্তীতে হাইকোর্ট ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর এক রায়ে ওই মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন গোলাম রব্বানী। এ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেন সর্ব্বোচ্চ আদালত।

এমএইচডি/ওএফ