২০১৭ সাল ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে হামলার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা। তারা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে ৩০০ মিটার দূরে পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে বসে এ পরিকল্পনা করে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হয়। তবে সেই মামলার বিচার চার বছরেও শুরু করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, তদন্তে আড়াই বছর সময় নেওয়া ও করোনায় দুই দফায় আদালত বন্ধ থাকায় কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

চার বছর আগে এই দিনে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে হামলার পরিকল্পনা করতে পান্থপথের ওই হোটেলে আশ্রয় নেয় জঙ্গিরা। তাদের পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে শোক দিবসের আগের রাতে অর্থাৎ, ২০১৭ সালের ১৪ আগস্ট অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, যে অভিযান শেষ হয় ১৫ আগস্ট সকালে। অভিযানে অংশ নেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াট সদস্যরা। অভিযানের এক পর্যায়ে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল থেকে বিকট বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। বিস্ফোরণে হোটেলের চতুর্থ তলার রাস্তার দিকের অংশের দেয়াল ও গ্রিল ধসে নিচে পড়ে। এতে এক জঙ্গি আত্মঘাতী হয়।

এ ঘটনায় পরদিন (১৬ আগস্ট) সন্ত্রাস দমন আইনে বাদী হয়ে মামলা করেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ ইমরুল সায়েদ।

এরপর দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের পরিদর্শক রাজু আহম্মেদ।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- আকরাম হোসেন খান নিলয় ওরফে স্লেড উইলসন, নাজমুল হাসান ওরফে মামুন, আবুল কাশেম ফকির ওরফে আবু মুসাব, আব্দুল্লাহ আইচান কবিরাজ ওরফে রফিক, তারেক মোহাম্মদ ওরফে আদনান, কামরুল ইসলাম শাকিল ওরফে হারিকেন ওরফে রোবট ওরফে তানজিম, লুলু সরদার ওরফে সহিদ ওরফে মিস্ত্রি, তাজরীন খানম শুভ, সাদিয়া হোসনা লাকী, আবু তুরাব খান, তানভির ইয়াসিন করিম ওরফে হিটম্যান ওরফে জিন, হুমায়রা জাকির নাবিলা, নব মুসলিম আব্দুল্লাহ ও তাজুল ইসলাম ওরফে ছোটন ওরফে মোহাম্মদ ওরফে ফাহিম। এদের মধ্যে তাজুল ইসলাম কিশোর হওয়ায় তার বিরুদ্ধে শিশু আইনে আলাদা চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে তাজরীন খানম, সাদিয়া হোসনা লাকী, আবু তুরাব খান, তানভির ইয়াসিন করিম, হুমায়রা জাকির নাবিলা ও আব্দুল্লাহ হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন। বাকি আট আসামি কারাগারে আছেন।

মামলাটি বর্তমানে ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট টাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম ছারোয়ান খান (জাকির) বলেন, মামলাটিতে গতবছর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে নোটিশ পাঠাই। কিন্তু সাক্ষীরা আদালতে হাজির হয়নি। এরপর দ্বিতীয় দফায় ‘লকডাউনের’ কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ নেওয়া আর সম্ভব হয়নি। মূলত মামলাটি তদন্তে প্রায় আড়াই বছর সময় নেওয়া ও দুই দফায় করোনার কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় একটু পিছিয়ে গেছে। সম্প্রতি আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করছি, এখন মামলাটির বিচার কার্যক্রম নিয়মিত চালু রেখে দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পারব।

টিএইচ/এসএসএইচ