ফাইল ছবি

২০১৭ সালে রাজধানীর কাকরাইলে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মা ও ছেলে। হত্যাকাণ্ডের দিন নিহত মা শামসুন্নাহার নামাজ পড়ছিলেন। নামাজরত অবস্থায় তাকে হত্যা করা হয়। মাকে বাঁচাতে এসে সন্তান শাওনকেও হত্যার শিকার হতে হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আশা করছেন নিহত শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী।

আশরাফ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মূলত সম্পত্তির লোভে আসামি আব্দুল করিমের হুকুমে আমার বোন শামসুন্নাহার ও তার ছেলে শাওনকে হত্যা করা হয়। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে হত্যাকাণ্ডটি ঘটায়। আব্দুল করিমের তৃতীয় স্ত্রী বাসায় এসে ওই ঘটনার কয়েকদিন আগে আমার বোনকে মারধর করেন। স্বামী হিসেবে আব্দুল করিম এর প্রতিবাদ একবারও করেননি।’

‘ঘটনার দিন আমার বোন শামসুন্নাহার নামাজ পড়ছিলেন। নামাজরত অবস্থায় তাকে হত্যা করা হয়। তার ছেলে শাওন সেসময় মাকে বাঁচাতে আসে। তাকেও হত্যা করে আসামিরা। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আশা করি। ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও হুকুমদাতা আব্দুল করিম। তার নির্দেশেই আমার বোন ও ভাগ্নেকে হত্যা করা হয়। আমি সকল আসামির মৃত্যুদণ্ড কামনা করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মা হাছিনা বানু (নিহত শামসুন্নাহারের মা) প্রতিদিনই তার জন্য কাঁদেন। তার সন্তানকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার মহান আল্লাহর কাছে চেয়ে যাচ্ছেন। তারও দাবি, সকল আসামির যেন শাস্তি হয়।’

মা ও ছোট ভাইকে হারিয়ে পাথরপ্রায় বড় ভাই মশিউর রহমান মিশুও ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার মা শামসুন্নাহার ও ভাই শাওনকে যারা হত্যা করেছে, আমি তাদের সকলের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’

সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সালাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। মা শামসুন্নাহারকে নামাজরত অবস্থায় হত্যা করা হয়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে ছেলে শাওনকেও হত্যা করা হয়। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আসামি আব্দুল করিমের তৃতীয় স্ত্রী শারমিন মুক্তা, মুক্তার ভাই আল-আমিন ওরফে জনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।’

‘মূলত আসামি আব্দুল করিম ছিলেন বেপরোয়া। একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় স্ত্রী শামসুন্নাহার এর প্রতিবাদ করেন। পারিবারিক কলহ ও সম্পত্তির লোভে তাদের হত্যা করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষ্যপ্রমাণে আমরা সম্পূর্ণভাবে বিষয়গুলো প্রমাণ করতে পেরেছি। আমরা আশা করছি, সকল আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত হবে।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে বিচারে কী প্রত্যা‌শা করছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী কামরুজ্জামান শাহিন বলেন, ‘যেহেতু আগামী ১৭ জানুয়ারি মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে, তাই এখন এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

মামলার আসামিরা হলেন- নিহত শামসুন্নাহারের স্বামী আব্দুল করিম, করিমের তৃতীয় স্ত্রী শারমিন মুক্তা ও মুক্তার ভাই আল-আমিন ওরফে জনি।

গত ১০ জানুয়ারি রাষ্টপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য আগামী ১৭ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত। ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি ওই তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক মো. আলী হোসেন আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় কাকরাইলের আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম রোডের ৭৯/১ নং বাড়িতে শামসুন্নাহার (৪৫) ও তার ছেলে শাওনকে (‘ও’ লেভেল শিক্ষার্থী) গলাকেটে হত্যা করা হয়। নিহতের স্বামী আবদুল করিম পুরানো ঢাকার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী। তিনি আদা, রসুন ও পেঁয়াজ আমদানিকারক।

ঘটনায় পরের দিন অর্থাৎ ২ নভেম্বর নিহত শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় নিহতের স্বামী আব্দুল করিম, করিমের তৃতীয় স্ত্রী শারমিন মুক্তা ও মুক্তার ভাই জনিসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

টিএইচ/এমএইচএস