চিত্রনায়িকা পরীমণির ক্ষেত্রে রিমান্ডের অপব্যবহার হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, পরীমণির মামলায় তৃতীয় দফা রিমান্ডের প্রয়োজন ছিল না। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবেদন করলেন আর বিচারক রিমান্ড মঞ্জুর করলেন, এটা তো সভ্য সমাজে হতে পারে না।

বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

পরীমণির জামিন আবেদন নিয়ে নিম্ন আদালতের আদেশ বাতিল সংক্রান্ত রুল ও পরীমণির রিমান্ডের বৈধতার আবেদনের শুনানিতে আদালত এ মন্তব্য করেন।

হাইকোর্ট বলেন, তৃতীয় দফায় পরীমণির রিমান্ড মঞ্জুর করে ম্যাজিস্টেট রিমান্ড ক্ষমতার অপ্যবহার করেছেন। তাদের সামনে কী মেটেরিয়াল ছিল যে তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনে রিমান্ড মঞ্জুর করলেন। এগুলো কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না, ঘটতে পারে না বর্তমানে।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, পরীমণির পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. মুজিবুর রহমান। তাদের সঙ্গে ছিলেন সৈয়দা নাসরিন ও মো. শাহীনুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহহিয়া দুলাল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান। 

শুনানির শুরুতে আইনজীবী জেড আই খান পান্না আদালতকে বলেন, আমরা রিমান্ড সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের জাজমেন্ট আদালতে দাখিল করেছি। এখানে যেসব নির্দেশনা আছে সেসব নির্দেশনা নিম্ন আদালতকে মেনে চলতে বলা হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের মামলা ছাড়া সাধারণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে এসব নির্দেশনা মেনে চলা হয় না।

এসময় হাইকোর্ট বলেন, এই মুহূর্তে জামিন তো হয়ে গেছে। রুলটি শুনানির জন্য অনুপযুক্ত হয়ে গেছে। আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, আমি জামিন বা রুলের বিষয়ে কিছু বলছি না।

তখন আদালত বলেন, রিমান্ড বিষয়ে আমরা একটা গাইডলাইন দেব। সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন তো আছেই, তারপরেও মানছে না তারা (ম্যাজিস্ট্রেট)।  

পরীমণির আইনজীবী মো. মুজিবুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, আমরা সিনিয়র কাউন্সিলের (জেড আই খান পান্নার আবেদন) নথিভুক্ত করে রাখব। তার (পরীমণির) রিমান্ড সম্পর্কে কি বলতে চান, বলতে পারেন।

আইনজীবী মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় যে বিধান আছে এবং আমাদের আপিল বিভাগের যে গাইডলাইন আছে এগুলো পরীমণির রিমান্ডের ক্ষেত্রে ফলো করা হয়নি।

এ সময় হাইকোর্ট পরীমণির দ্বিতীয় রিমান্ড কত দিনের ছিল জানতে চাইলে আইনজীবী বলেন, দুই দিনের ছিল। প্রথম রিমান্ড ছিল চার দিন। তৃতীয় দিনের রিমান্ড ছিল একদিনের।

তখন হাইকোর্ট বলেন, গোটা ঘটনায় যদি আমরা যদি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৩৫ এবং ৪৩৯ ধারা অনুযায়ী ওই রুলটা (দুই দিনের মধ্যে পরীমণির জামিন আবেদনের শুনানি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না) পেন্ডিং অবস্থায় ডাইরেকশন (নির্দেশনা) দিতে পারি।
তখন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান বলেন, রুল তো নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

হাইকোর্ট বলেন, একটা অংশ নিষ্পত্তি হয়ছে। আরেকটা অংশ আছে। এরপর আদালত আইনজীবীকে ফৌজদারি কার্যবিধি থেকে ৪৩৫ এবং ৪৩৯ ধারা পড়ে শোনাতে বললে আইনজীবী দুটি ধারা পড়ে শোনান। আমরা তাহলে ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে রিমান্ডের রেকর্ড কল করতে পারি একটা সেটিসফেক্টরি (সন্তোষজনক) জবাব দেওয়ার জন্য। জবাব দিতে যদি ফেইল করে তাহলে তাদের অ্যাপিয়ারেন্স (হাজির হওয়ার নির্দেশ) দেব যে, আমরা জবাবে সন্তুষ্ট না। 

আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই বিষয়ে আদেশ দিলে আপনাদের কোনো সমস্যা আছে? সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আজকে যে প্রশ্নটি উঠেছে, সেটি হচ্ছে রিমান্ড নিয়ে। অভিযুক্ত আবেদনকারীকে (পরীমণিকে) তিনবার রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন কি রিমান্ডের ওপর রুল ইস্যু করতে চাইছেন? 

হাইকোর্ট বলেন, রুল ইস্যু করতে চােইছি না, রিপোর্ট কল করতে চাইছি। তাদের কাছে কি মেটেরিয়াল (উপাদান) ছিল তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর করলেন। মিজানুর রহমান বলেন, এখন তো সে (পরীমণি) রিমান্ডে নেই।

আদালত বলেন, রিমান্ডে নেই। কিন্তু কি মেটেরিয়াল ছিল যে, তিনবার রিমান্ডে দিলেন। কেন ম্যাজিস্ট্রেট রিমান্ড ক্ষমতার অপ্যবহার করলেন। তারা এই মামলাটায় চারদিন রিমান্ডের পরে তৃতীয় দফায় রিমান্ডে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল কি না, তদন্তকারী কর্মকর্তা, কেস ডকেটসহ (মামলার নথি) কোর্টে অ্যাপিয়ার করতে বলব।

পরে আজ দুপুর ২টার সময় এবিষয়ে আবারও শুনানির কথা থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘নট টু ডে’ বলে আদেশ দেন।

এর আগে গত রোববার চিত্রনায়িকা পরীমণিকে দফায় দফায় রিমান্ডে নেওয়ার বৈধতা প্রশ্নে স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে মানবাধিকার ও আইনি সহায়তাকারী সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

এমএইচডি/এমএইচএস/জেডএস