এফআর টাওয়ারে আগুন- ফাইল ছবি

বনানীর এফআর টাওয়ারের নকশা জালিয়াতির অভিযোগে করা মামলায় ভবন মালিক ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্ত প্রতিবেদনে ৭ আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন ৫ আসামিকে চার্জশিটভুক্ত করা হয়েছে।

রোববার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর জেলা জজ আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এর আগে গত ২৫ নভেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ওই চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কমিশনের পরিচালক (জনসংযোগ) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

২০১৯ সালের ২৫ জুন কমিশনের উপপরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক ২০ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। পরে তিনিই তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

জানা যায়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ নাজমুল হুদা মৃত্যুবরণ করায় তাকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এছাড়া চার্জশিট থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্তরা হলেন- রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান কে এ এম হারুন, সাবেক সদস্য মো. রেজাউল করিম তরফদার, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়া, সাবেক প্রধান ইমারত পরিদর্শক মো. মাহবুব হোসেন সরকার, সাবেক ইমারত পরিদর্শক মো. আওরঙ্গজেব সিদ্দিকি এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামছুর রহমান।

অন্যদিকে চার্জশিটে নতুন যোগ হওয়া আসামিরা হলেন- রাজউকের উচ্চমান সহকারী মো. সাইফুল আলম, ইমারত পরিদর্শক (নকশা জমা গ্রহণকারী) ইমরুল কবির, ইমারত পরিদর্শক মো. শওকত আলী, উচ্চমান সহকারী মো. শফিউল্লাহ এবং সাবেক অথরাইজড অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম।

অন্যদিকে মূল এজাহারভুক্ত মামলার আসামিরা হলেন- এফআর টাওয়ারের মালিক এস এম এইচ আই ফারুক, রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল, এফআর টাওয়ার ওনার্স সোসাইটির সভাপতি কাসেম ড্রাইসেলের এমডি তাসভীর-উল-ইসলাম, সাবেক পরিচালক মো. শামসুল আলম, বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক মো. মোফাজ্জল হোসেন,সহকারী পরিচালক শাহ মো. সদরুল আলম, সহকারী অথরাইজড অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক জাহানারা বেগম, সহকারী পরিচালক মেহেদউজ্জামান, নিম্নমান সহকারী মুহাম্মদ মজিবুর রহমান মোল্লা ও অফিস সহকারী মো. এনামুল হক।

এছাড়া বিসিএসআইআরের সদস্য (অর্থ) মুহাম্মদ শওকত আলী ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুল্লাহ আল বাকিও ওই মামলায় আসামি ছিলেন। যারা অনুমোদন করা চার্জশিটের আসামি।

আসামিদের বিরুদ্ধে রাজউকের ভুয়া ছাড়পত্রের মাধ্যমে এফআর টাওয়ারকে ১৯ তলা থেকে বাড়িয়ে ২৩ তলা করা, ওপরের ফ্লোরগুলো বন্ধক দেওয়া ও বিক্রি করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর এফআর টাওয়ার নির্মাণে ইমারত বিধিমালা লঙ্ঘন এবং নকশা জালিয়াতির অভিযোগে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয় দুদক। চার্জশিটে এফআর টাওয়ার ভবনের এস এম এইচ আই ফারুক ও রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলসহ ৫ জনকে আসামি করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৭ জন মারা যাওয়ার পর এই ভবন নির্মাণে নানা অনিয়মের বিষয়গুলো বেরিয়ে আসতে থাকে।

বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ওই ভবনের জমির মূল মালিক ছিলেন প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুক। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভবনটি নির্মাণ করে রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিমিটেড। সে কারণে সংক্ষেপে ভবনের নাম হয় এফআর টাওয়ার।

অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ৪টি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি নকশা অনুমোদনে বিধি লঙ্ঘন এবং নির্মাণের ক্ষেত্রে ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এফআর টাওয়ারের ১৮ তলার নকশা অনুমোদন করা হয়েছিল বিধি লঙ্ঘন করে। তার ওপরে আরও ৫টি ফ্লোর নির্মাণের নকশাকে বৈধতা দিতে বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি হয়। ত্রুটি ও নিয়মের ব্যত্যয় ছিল ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রেও।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির সাতটি ধারায় এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন- ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

আরএম/এফআর