সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দাখিল না করার মামলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) বিএনপির সাবেক মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে খালাসের বিরুদ্ধে দুদকের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (১৮ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. সেলিমের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।

পরে আইনজীবী খুরশিদ আলম খান জানান, দুদকের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ইশরাক হোসেনকে যে আদালত খালাস দিয়েছেন সে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আত্মসমর্পণের পর ইশরাককে জামিন দিতে সংশ্লিষ্ট আদালতকে নির্দেশও দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দাখিল না করার মামলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিএনপির সাবেক মেয়র প্রার্থী ও সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত বছরের ২৩ নভেম্বর সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা না দেওয়ায় ইশরাক হোসেনকে খালাস দেন আদালত।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এই রায় দেন।

যথাযথ প্রক্রিয়ায় সম্পদের নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে সক্ষম না হওয়ায় আসামি ইশরাককে খালাস দেন আদালত। রায়ে বলা হয়, আসামি ইশরাক হোসেনকে সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার নোটিশটি যথাযথভাবে দেওয়ার সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।

দুদকের করা ওই মামলায় ইশরাক হোসেনের বিরুদ্ধে গত বছরের ২০ জানুয়ারি অভিযোগ গঠন করেন আদালত। দুদকের পক্ষ থেকে ছয়জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।

২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর ইশরাকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। ওই বছরের ২৫ নভেম্বর বিএনপির নেতা সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন ও মেয়ে সারিকা সাদেকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দেয় দুদক।

 

দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই দুজনের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করে দুদক। সম্পদের হিসাব বিবরণী নির্দিষ্ট সময়ে জমা না দেওয়ায় ২০১০ সালের আগস্টে তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করেন দুদকের ওই সময়ের সহকারী পরিচালক মো. শামছুল আলম।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, সাদেক হোসেন খোকার স্থাবর-অস্থাবর অনেক সম্পত্তি রয়েছে তার ছেলে ইশরাক হোসেন ও মেয়ে সারিকা সাদেকের নামে। এসব সম্পদের অর্থের উৎস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। তাদের সম্পত্তির হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার জন্য সাত দিন সময় দিয়ে দুদক নোটিশ দিলেও নির্ধারিত সময়ে তারা তা দাখিল করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

নির্দিষ্ট তারিখে সম্পদের হিসাব জমা না দেওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(২)(ক) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হওয়ায় মামলা দুটি করা হয়।

দুদক সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতে রিট ও লিভ টু আপিল থাকার কারণে মামলার তদন্ত দীর্ঘদিন আটকে ছিল। আদালতে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হওয়ার পর উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান। তার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন দেয়।

২০১১ সালে দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে একাধিক মামলা করে দুদক। এছাড়া অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর খোকার ১৩ বছরের কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা জরিমানার রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩। একইসঙ্গে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা দখলেও নেওয়া হয়। দুদকের ওই মামলায় খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন ও মেয়ে সারিকা সাদেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলেও পরে অভিযোগপত্র থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়।

ইশরাক হোসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। 

এমএইচডি/জেডএস