ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচার বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার এ রিট দায়ের করেন। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যংকের গর্ভনর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অনলাইনভিত্তিক আর্থিক লেনদেন তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাতে অনলাইন পেমেন্টের সুবিধা, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির সুযোগে ব্যাঙের ছাতার মতো ই-কমার্স ভিত্তিক অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ইভ্যালি, ধামাকা, আলেশা মার্ট, কিউকম, দালাল, ই-অরেঞ্জ, আলাদিনের প্রদীপ, দারাজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। 

গত কয়েক বছরে এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কার্যকর নজরদারির অভাবের সুযোগে গ্রাহক আকর্ষণে বিভিন্ন অনৈতিক অফার, ডিসকাউন্ট নামে গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলেছি।  

আইনজীবী বলেন, ইভ্যালি, ধামাকা, আলেশা মার্ট, কিউকম, দালাল, ই-অরেঞ্জ, আলাদিনের প্রদীপ, দারাজ প্রতিষ্ঠার মাত্র দুয়েক বছরের মধ্যে বিভিন্ন অফারের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা মূলত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে এই অর্থ সংগ্রহ করে। বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী এসব কোম্পানি বিপুল অর্থ ইতিমধ্যে বিদেশে পাচার করেছে। ই-ওয়ালেট, গিফ্ট কার্ডসহ আরো অন্যান্য অ-অনুমোদিত পদ্ধতিতে লেনদেন করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে লাখ লাখ গ্রাহকদের সর্বস্বান্ত করেছে। এসব অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত দেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গ করেছে সরকারি দফতরগুলোর নাকের ডগায়। কিন্তু তারা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বছরের পর বছর নোটিশগ্রহীতাদের কার্যকর নজরদারির অভাবে এসব কোম্পানিগুলো আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সরকারি দফতরগুলো তাদের সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগে গাফিলতি ও ব্যর্থতার ফলে বাংলাদেশের লাখ লাখ অনলাইন গ্রাহক যাদের বেশিরভাগই তরুণ আজ সর্বস্বান্ত। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ই-কমার্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যে সম্ভাবনা সেটিও আজ প্রশ্নবিদ্ধ। কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না।

সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসারপ্রাপ্ত বিচারপতির সমন্বয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে যাদের গাফিলতির কারণে লাখ লাখ গ্রাহক সর্বস্বান্ত হয়েছে তাদের চিহ্নিত করে আইন আনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেছি। এছাড়া দুদকের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ইভ্যালি, ধামাকা, আলেশা মার্ট, কিউকম, দালাল, ই-অরেঞ্জ, আলাদিনের প্রদীপ, দারাজ ইত্যাদি কর্তৃক পাচার করা অর্থের পরিমাণ নিরূপণ করে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বাংলাদেশ ব্যাংককে এ পর্যন্ত ইভ্যালি, ধামাকা, আলেশা মার্ট, কিউকম, দালাল, ই-অরেঞ্জ, আলাদিনের প্রদীপ, দারাজ ইত্যাদিতে মোট কত টাকা লেনদেন হয়েছে এবং গ্রাহকরা মোট কত টাকা দিয়েছে তা চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে।

এমএইচডি/জেডএস