যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া ও বহিষ্কৃত কমিশনার মোমিনুল হক সাঈদের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে এসেছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এ প্রতিবেদন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা হবে।

রোববার (১৭ অক্টোবর) ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।

সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধারে কাজ করছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। অর্থপাচারের ওপর দেওয়া প্রতিবেদনে নাম রয়েছে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালিদ মাহমুদ ভুইয়াঁ, এনামুল হক আরমান, রাজীব হোসেন রানা, জামাল ভাটারা, মোমিনুল হক সাঈদ ও শাজাহান বাবলুর।

এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এর আগে বিদেশে কারা অর্থপাচার করছে তাদের বিষয়ে হাইকোর্ট জানতে চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে সিআইডির পক্ষ থেকে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকা পুলিশের আইজির মাধ্যমে আমাদের হাতে এসেছে। এফিডেভিটও করেছি। শুনানির দিন (২১ অক্টোবরের পর) এ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করব।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৮টি মামলায় বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে এ প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, দুবাই- এসব দেশে অর্থপাচার করা হয়েছে। এ টাকার অংক অনেক বেশি। টাকাগুলো উদ্ধারের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। টাকা উদ্ধার হবে আশা করি। এখানে ইসমাঈল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভুইয়াঁ, এনামুল হক আরমান, মোমিনুল হক সাঈদের নাম রয়েছে।

এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে অর্থপাচারকারীদের নাম-ঠিকানা ও তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন আদালত।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম খান ও অ্যাডভোকেট সুবীর নন্দী দাস। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।

গত ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে সুইস ব্যাংকসহ গোপনে বিদেশে পাচারকরা অর্থ অবিলম্বে ফেরত আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়। ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম খান ও অ্যাডভোকেট সুবীর নন্দী দাস এ রিট দায়ের করেন।
রিট আবেদনে সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে বিবাদীদের চরম ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়। একইসঙ্গে সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের অতীতের এবং বর্তমানে এ ধরনের অর্থপাচার ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে একটি স্পেশাল কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়। পাশাপাশি পাচারের বিষয়ে তথ্য থাকলে তা প্রকাশ করে পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের প্রতি নোটিশ জারির আবেদন করা হয়।

রিটে অর্থসচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, অ্যাটর্নি জেনারেল, বাণিজ্যসচিব, পররাষ্ট্রসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ১৫ জনকে বিবাদী করা হয়।

এমএইচডি/জেডএস/এসএম/জেএস