পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যু : তদন্ত রিপোর্ট হাইকোর্টে দাখিলের নির্দেশ
সোমবার রাতে রংপুরের হারাগাছের চিত্র
রংপুরের হারাগাছে পুলিশের বিরুদ্ধে তাজুল ইসলাম (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে পুলিশের গঠন করা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া ময়না তদন্তের রিপোর্টও দাখিল করতে বলা হয়েছে। আগামী ১১ নভেম্বরের মধ্যে হাইকোর্টে রিপোর্ট দাখিল করতে হবে।
বুধবার (৩ নভেম্বর) বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এর আগে এ ঘটনায় রংপুর পুলিশ কমিশনারের প্রতিবেদন আদালতে পড়ে শোনান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ কমিশনারের প্রতিবেদনে বলা হয়, রংপুরের হারাগাছে পুলিশের বিরুদ্ধে তাজুল ইসলাম (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে একজন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তাজুলের মৃত্যুর ঘটনায় মরদেহের সুরতহাল রিপোর্টে আঘাতের চিহ্ন নেই উল্লেখ করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির কাছে পাঁচ গ্রাম হেরোইন পাওয়া গিয়েছিলো বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এর আগে মঙ্গলবার রংপুরের হারাগাছে পুলিশের বিরুদ্ধে তাজুল ইসলাম (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চান হাইকোর্ট। রংপুরের পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত ও এ ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আদালতকে জানাতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্তকে বলা হয়। বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্ব-প্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন।
ঘটনাটি আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত পুলিশি নির্যাতনে তাজুল ইসলামের মৃত্যু নিয়ে প্রতিবেদন পড়ে শোনান।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় পুলিশি নির্যাতনে তাজুল ইসলাম মৃত্যুর ঘটনা আদালতে নজরে এনে বলেন, এটা এতই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যে, দায়ীদের বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত আদেশ দিতে পারেন। কারণ, সংবিধানে প্রত্যেকটা নাগরিকের বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তারপরও কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটছে? সর্বোচ্চ আদালতকে এ ধরনের ঘটনায় হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা হাইকোর্ট দিয়েছেন।
অমিত দাশ গুপ্ত আরও বলেন, আদালতের আদেশ মোতাবেক এরই মধ্যে রংপুর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আদালতের আদেশের কথা জানিয়েছি। আশা করি আজ (বুধবার) রাতের মধ্যে এ ঘটনার সার্বিক বিষয় তারা আমাকে জানাবেন। আমি কালকে তা আদালতে উপস্থাপন করব।
সোমবার রংপুরের হারাগাছে পুলিশের বিরুদ্ধে তাজুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হারাগাছের নতুন বাজার বছি বানিয়ার তেপতি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাজুল ইসলাম উপজেলার হারাগাছ নয়াটারী দালালহাট গ্রামের বাসিন্দা।
জানা গেছে, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নয়া বাজার বছি বানিয়ার তেপতি থেকে তাজুল ইসলামকে মাদকসহ আটক করে পুলিশ। এ সময় তিনি পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে পালানোর চেষ্টা করেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ তাকে মারধর করলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তাজুল ইসলাম। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে থানা ঘেরাও করেন। বিক্ষুব্ধ জনতা ইটপাটকেল ছুড়ে মারার পাশাপাশি পুলিশের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এমএইচডি/এইচকে