রাজধানীর কলাবাগানে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিনকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ১০ মাসেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তাদের দাবি, ভিকটিমের (আনুশকা) ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও বয়স নির্ধারণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাতে না পাওয়ায় তদন্তের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবে বলে জানিয়েছেন পিবিআই সংশ্লিষ্টরা।

গত ৭ জানুয়ারি কলাবাগান থানা এলাকায় আনুশকাকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। ওই দিন রাতেই আনুশকার বাবা মো. আল আমিন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটি কলাবাগান থানা পুলিশ তদন্ত করলেও বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই।

মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মো. খালেদ সাইফুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মামলাটি তদন্ত প্রায় শেষ। খুব শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করব।

প্রতিবেদনে দিহানের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আমরা তদন্ত প্রতিবেদনটি শেষ করে ফেলেছি। খুব দ্রুত আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করব। তখন  আপনারা জানতে পারবেন। এ বিষয়ে এখন আর বেশিকিছু বলা যাচ্ছে না।

প্রতিবেদন জমা দিতে ৩০ দিন সময় চেয়ে আবেদন

গত ১৬ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা মো. খালেদ সাইফুল্লাহ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরও ৩০ দিন সময় চেয়ে আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ করে এই মামলা সংক্রান্ত সব তথ্য গ্রহণ করি। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট আরও বিশ্লেষণ ও সুস্পষ্ট মতামতসহ সিআইডি ডিএনএ ল্যাব থেকে সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করি। আদালতের নির্দেশে ওই রিপোর্টসহ আসামি ও ভিকটিমের পাসপোর্ট ও জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ফরেনসিক বিভাগের কাছে পাঠাই এবং দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার অনুরোধ করি। তারপরও ভিকটিমের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও বয়স নির্ধারণ রিপোর্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। তাই প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরও ৩০ দিনের সময়ের প্রয়োজন।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে তিনি ও তার স্ত্রী কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। বেলা সাড়ে ১১টায় আনুশকা কোচিংয়ের পেপার আনতে বাইরে যাচ্ছে বলে ফোনে তার মাকে জানায়। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে আনুশকা বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

এজাহারে বলা হয়, দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে দিহান আনুশকার মাকে ফোন দেন। তিনি ফোনে জানান, আনুশকা তার বাসায় গিয়েছিল। সেখানে অচেতন হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। এ কথা শুনে আনুশকার মা ১টা ৫২ মিনিটে হাসপাতালে পৌঁছান। সেখানে গিয়ে তিনি কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে জানতে পারেন আনুশকাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

আনুশকার বাবা এজাহারে আরও বলেন, তারা বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছেন যে দিহান তার মেয়েকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে ধর্ষণের উদ্দেশে দুপুর ১২টার দিকে বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। পরে দিহান ফাঁকা বাসায় আনুশকাকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে আনুশকা অচেতন হয়ে পড়ে। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দিহান তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় গ্রেফতার ইফতেখার ফারদিন দিহান ৮ জানুয়ারি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি গ্রহণ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

টিএইচ/এসএসএইচ