ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাঈদ ও বাংলাদেশি নাগরিক শাহিনুর টি আই এম নবী দম্পতির তিন বছরের শিশু এখন অস্ট্রেলিয়ায়। বাবা শাহিনুর শিশুটিকে নিয়ে সে দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।  

রোববার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে ডিএমপি কমিশনারের দাখিল করা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আদালতে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার জানান, ১৬ নভেম্বর সকালে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে শিশুটিকে নিয়ে বাবা শাহিনুর টি আই এম নবী অস্ট্রেলিয়া চলে গেছেন। অর্থাৎ হাইকোর্ট দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগেই তিনি চলে গেছেন!

আদালতে রিট দায়ের করা মায়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ব্যারিস্টার ফাইজা মেহরিন।

শাহিনুর টি আই এম নবীর সব সম্পদ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

গত ১৭ নভেম্বর তিন বছরের সন্তানসহ পলাতক বাবাকে (টি আই এম নবী) হাজির করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ও গুলশান থানার পুলিশকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাঈদের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার (২১ নভেম্বর) বিকেল ৩টার মধ্যে তাদের আদালতে হাজির করতে বলেছিলেন। 

ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাঈদের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ নভেম্বর শাহিনুর টি আই এম নবীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। শিশুকে নিয়ে বাবা শাহিনুর যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন সেজন্য ইমিগ্রেশন পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। 

এর আগে ১৫ নভেম্বর ওই শিশুকে পরদিন ১৬ নভেম্বর সকালের মধ্যে মায়ের আইনজীবীর কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু ওই শিশুর বাবা আইনজীবীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। এ কারণে বাবা শাহিনুরের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া এ মামলা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।

গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট দুই মাসের জন্য ওই শিশুকে ভারতীয় নাগরিক মা সাদিকা সাঈদের হেফাজতে রাখার আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, মা ও শিশু মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) ব্যবস্থাপনায় থাকবে। তবে বাংলাদেশি বাবা সপ্তাহে তিনদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিশুর সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। এ দুই মাস সাদিকা সাঈদের পাসপোর্ট গুলশান থানায় জমা রাখতে বলা হয়।

সাদিকা সাঈদের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশের পর শিশুর বাবা তার সন্তানকে উন্নত পরিবেশে গুলশান ক্লাবে রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শিশুর মঙ্গলের কথা চিন্তা করে আমরাও রাজি হই। গুলশান ক্লাবেই মা ও শিশু অবস্থান করছিলেন। এক পর্যায়ে তিন বছরের ওই শিশুকে বেড়ানোর কথা বলে গুলশান ক্লাব থেকে নিয়ে যান বাবা শাহিনুর। কিন্তু পরে আর মায়ের কাছে দিয়ে যাননি। এর মধ্যে শিশুর মায়ের বিরুদ্ধে জিডি ও মামলা করেন শাহিনুর।

বিষয়টি গত ১৪ নভেম্বর হাইকোর্টের নজরে আনা হলে আদালত ১৬ নভেম্বর সকালের মধ্যে শিশুটিকে আদালতে হাজির করতে বলেছিলেন। কিন্তু আদালতের আদেশ প্রতিপালন করা হয়নি।

আইনজীবীরা জানান, ভারতের বিয়ে সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে অন্ধপ্রদেশের হায়দরাবাদের সাদিকা সাঈদ শেখ নামে এক মেয়েকে বিয়ের জন্য পছন্দ করেন ঢাকার বারিধারার এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান শাহিনুর টি আই এম নবী। সাদিকা হায়দারাবাদের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান।

২০১৭ সালে হায়দারাবাদে তাদের ঘটা করে বিয়ে হয়। বিয়ের পর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাস শুরু করেন তারা। কয়েক মাস পর ঢাকায় চলে আসেন। এর মধ্যে এই দম্পতির ঘরে ২০১৮ সালে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এক পর্যায়ে তাদের সংসারে অশান্তি নেমে আসে। সাদিকা শেখকে মারধরও করেন তার স্বামী শাহিনুর। তাকে ভারতের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

বিষয়টি ভারতে সাদিকার আত্মীয়-স্বজনরা জানতে পারেন। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হয়। তারপরও সমাধান হয়নি। পরে মেয়েটির বোন মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) কাছে আইনি সহায়তা চান।

গত ৮ আগস্ট সাদিকা শেখ ও তার শিশু সন্তানসহ আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হেবিয়াস কর্পাস (অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রাখা) রিট করে ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) পরিচালক ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক লুলান চৌধুরী।

আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ জানান, হাইকোর্টে মামলা দায়ের করার পরপরই বাংলাদেশি নাগরিক শাহিনুর টি আই এম নবী ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাইদকে ডিভোর্স দেন।

এমএইচডি/আরএইচ/জেএস