বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায়ে সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের দাবি রাষ্ট্রপক্ষ মামলা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তারা আশা করছেন আসামিরা খালাস পাবেন।

রোববার (২৮ নভেম্বর) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত এ রায় ঘোষণা করবেন।

সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আবরার হত্যা মামলাটি একটি আলোচিত হত্যা মামলা। আগামী ২৮ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলার সব সাক্ষীর তথ্য উপাত্ত, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিসহ সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আদালতে উপস্থাপন করেছি। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলাটি প্রমাণ করতে পেরেছি।তাই আমরা সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে বলে আশা করছি।

কিন্তু আসামি পক্ষের আইনজীবী ফরুক আহমেদ তার তিন আসামি মামলা থেকে খালাস পাবেন বলে প্রত্যাশা করেছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এই মামলার আসামি শামীম বিল্লাহ, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, এস এম মাহমুদ সেতুর পক্ষে ছিলাম। তাদের পক্ষে আমি আদালতে সব তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেছি। আমরা আশা করছি এই মামলা থেকে তারা খালাস পাবেন। কারণ এই তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। মিজান ও সেতু দুই জনের নাম এজাহারে উল্লেখ নেই। একই সঙ্গে তাদের তিনজনের বিরুদ্ধে এজাহারে সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তাই আমরা আশা করছি এ মামলা থেকে আসামিরা ন্যায়বিচার পাবে এবং খালাস পাবে।

এদিকে, গত ১৪ নভেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। 

এ মামলায় মোট ৪৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং এর বাইরে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আরও ছয় জন জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন এবং এজাহারের বাইরে থাকা ছয় জনের মধ্যে পাঁচ জনসহ মোট ২২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক রয়েছেন তিন জন। অভিযোগপত্রে ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে এবং ২১টি আলামত ও আটটি জব্দ তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

এজাহারে থাকা আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদুজ্জামান জিসান ও এহতেশামুল রাব্বি তানিম।

এজাহারবহির্ভূত ছয় আসামি হলেন- ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, এস এম মাহমুদ সেতু ও মোস্তবা রাফিদ।

পলাতক তিন জন হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এদের মধ্যে প্রথম দুজন এজাহারভুক্ত।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে গিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই বছরের ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

পুলিশ পরে ২২ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে আট জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এদের সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

আবরার ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

টিএইচ/জেডএস