আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার আসামি অমিত সাহাকে নির্দোষ দাবি করেন মা দেবী সাহা / ছবি- ঢাকা পোস্ট

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার আসামি অমিত সাহাকে নির্দোষ দাবি করে মা দেবী সাহা, কাকা রুপন সাহা আদালত চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অমিত সাহার মা দেবী সাহা বলেন, ‘শুধুমাত্র ছাত্রলীগ করার কারণে আমার ছেলেকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমার ছেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিষয়ে কোনো কথা বলেনি।’

দুই প্রিজন ভ্যানের মাঝে দুই ফুটের মতো জায়গা দিয়ে আসামিদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন স্বজনরা। রায় পেছানোর পর তাদের কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। সামান্য ওই ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে স্বজনরা প্রিজন ভ্যানে থাকা প্রিয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন।

মামলায় কী সাজা হয়, সেই চিন্তায় কান্নায় ভেঙে পড়েন আসামিদের স্বজনরা / ছবি- ঢাকা পোস্ট

চাঞ্চল্যকর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ছিল আজ (২৮ নভেম্বর)। কিন্তু আদালত ‘মামলার আসামির সংখ্যা বেশি হওয়ায় রায় প্রস্তুতে একটু সময় লাগছে’ জানিয়ে ৮ ডিসেম্বর (বুধবার) নতুন তারিখ ধার্য করেন। 

রোববার (২৮ নভেম্বর) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান বেলা ১২টা ৬ মিনিটে এজলাসে এসে রায় পেছানোর এ আদেশ দেন।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন। পরে রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে আবরারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই বছরের ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

দুই প্রিজন ভ্যানের মাঝে দুই ফুটের মতো ফাঁকা জায়গা। সেখানে দাঁড়িয়ে আসামিদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন স্বজনরা / ছবি- ঢাকা পোস্ট

পুলিশ ২২ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এদের সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে দায়ী করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং এর বাইরে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আরও ছয়জন জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন এবং এজাহারের বাইরে থাকা ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনসহ মোট ২২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক রয়েছেন তিনজন। অভিযোগপত্রে ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে এবং ২১টি আলামত ও আটটি জব্দ তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

এজাহারে থাকা আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদুজ্জামান জিসান ও এহতেশামুল রাব্বি তানিম।

এজাহারবহির্ভূত ছয় আসামি হলেন- ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, এস এম মাহমুদ সেতু ও মোস্তবা রাফিদ। পলাতক তিনজন হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এদের মধ্যে প্রথম দুজন এজাহারভুক্ত।

আবরার ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

এআর/এমএসি/টিএইচ/