সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদে কোনো ব্যক্তির চলাফেরার স্বাধীনতার যে কথা বলা হয়েছে তা একচ্ছত্র কোনো অধিকার নয় বলে মত দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগ বলেছেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে এবং আইন মেনে যে কাউকে চলাফেরায় বাধা দেওয়া যাবে। তবে, আইন ও বিধি ছাড়া কারো চলাফেরার স্বাধীনতা খর্ব করা অসাংবিধানিক।

দুর্নীতি মামলার আসামি বা সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে দুদকের আবেদন নিষ্পত্তির পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। ১৮ পৃষ্ঠার ওই রায় বুধবার (১ ডিসেম্বর) প্রকাশ করা হয়েছে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেন, ৩৬ অনুচ্ছেদে যে স্বাধীনতা দেওয়া আছে তার মূল উদ্দেশ্য সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করা। তাই ফৌজদারি অপরাধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে পাসপোর্ট জব্দ করা এবং বিদেশ যাত্রা আটকানো যাবে। তারপরও যদি কেউ আইনকে পাশ কাটিয়ে বিদেশ যাত্রার চেষ্টা করে, তাহলে ওই ব্যক্তিকে আটকানোর পর তিন কার্যদিবসের মধ্যে আদালতকে জানাতে হবে। কিন্তু ফৌজদারি অপরাধে কারো নাম এলেই তার বিদেশযাত্রা রোধ করা যাবে না।  

গত ২৬ সেপ্টেম্বর সুনির্দিষ্ট বিধি বা আইন প্রণয়ন না করা পর্যন্ত দুর্নীতি মামলার আসামি বা সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিদেশ যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে দুদকের আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেন আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ হাইকোর্টের আদেশ সংশোধন করে ওইদিন রায় দেন।

দেশ ত্যাগে দুদকের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে পৃথক ৫টি রিটে হাইকোর্ট তিনটি রায় ও দুটি আদেশ দেন। ওইসব আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন। 

এ ৫টি রিটের মধ্যে একটি হলো, নরসিংদীর আতাউর রহমানের মামলা। তাকে বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আতাউর রহমান ওরফে সুইডেন আতাউর হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে জারি করা রুলের ওপর এ বছরের ১৬ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট। 

ওই রায়ে আতাউর রহমানকে দুদকের দেওয়া দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞার চিঠি অবৈধ ঘোষণা করে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ অভিমতে বলেন, সুনির্দিষ্ট বিধি বা আইন প্রণয়ন না করা পর্যন্ত দুর্নীতি মামলার আসামি বা সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তির বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে দুদক নয়, সিদ্ধান্ত দেবেন বিশেষ জজ আদালত। 

হাইকোর্ট রায়ে বলেছিলেন, বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে দুদকের সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধি নেই। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধিমালা করা প্রয়োজন। তাই আশা করছি, এ বিষয়ে দুদক বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আইন বা বিধি করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। 

এমএইচডি/এসএম/জেএস