বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেছেন, ‘ঘটনার মাস্টারমাইন্ড কথিত বড়ভাইদের জাজমেন্টে আনা হয়নি।’

বুধবার (৮ ডিসেম্বর) মামলার রায়ের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, এছাড়া বুয়েট কর্তৃপক্ষের নেগলেন্সির বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়নি। তাই এই রায়ে জাজমেন্ট সঠিক হয়নি। এ সময় উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথাও জানান তিনি।

ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা মনে করেছিলাম, যে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি আদালত সেগুলো জাজমেন্টে আনবেন। কিন্তু আদালত কোনো কিছু বিবেচনায় না নিয়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজার রায় দিয়েছেন। আসামি প্যানেল থেকে যে বিষয়গুলো আমরা উপস্থাপন করেছিলাম, একটিও বিজ্ঞ আদালত জাজমেন্টে আনেননি। আমাদের জেরাগুলো খণ্ডন করেননি বলে মনে করছি। পুর্নাঙ্গ রায় পেলে বুঝা যাবে। জাজমেন্ট সঠিক হয়নি, আমরা উচ্চ আদালতে যাব।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বড় ভাইদের নির্দেশে কাজটি করা হয়েছিল বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বড়ভাই কারা ছিল, তাদের তদন্তে আনা হয়নি। রাত ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ঘটনা অথচ কর্তৃপক্ষ কিছুই জানে না। বুয়েট কর্তৃপক্ষের যে নিরাপত্তার বিষয়ে নেগলেন্সি ছিল তাদেরও জাজমেন্টে আনা হয়নি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবনের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২২ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার বাকি তিন আসামি পলাতক। এরপর বেলা পৌনে ১২টায় তাদের এজলাসে তোলা হয়।

গত ২৮ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। তবে রায় প্রস্তুত না হওয়ায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান রায় ঘোষণার জন্য ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। ওইদিনও আদালতে আসামিদের হাজির করা হয়।

গত ১৪ নভেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে মামলার রায় ঘোষণার জন্য প্রথমে ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। এ মামলায় মোট ৪৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।

২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং এর বাইরে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আরও ছয় জন জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন ও এজাহারের বাইরে থাকা ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনসহ মোট ২২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক রয়েছেন তিনজন। অভিযোগপত্রে ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। ২১টি আলামত ও আটটি জব্দ তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

আবরার হত্যা মামলায় গ্রেফতার ২২ আসামি হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু।

এএসএস/এমএসি/এআর/এমএইচএস