ছবি : সংগৃহীত

বরিশালের বানারীপাড়ায় শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার স্বজনদের জমি দখলের অভিযোগের প্রকৃত ঘটনা জানতে এবং এর  সঙ্গে কারা জড়িত এ বিষয়ে তথ্য দিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমানের পক্ষে অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার দত্ত এ নোটিশ পাঠান।

জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ, শিক্ষা সচিব, শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, বরিশালের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও বরিশাল ২ আসনের সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের নোটিশে বিবাদী করা হয়েছে।

নোটিশে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে প্রকৃত ঘটনা ও জমি দখলের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় উচ্চ আদালতে রিট করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার পরিবারের জমি দখলের অভিযোগ সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন নোটিশে সংযুক্ত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার স্বজনদের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। বরিশালের বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহে আলমের উপস্থিতিতে ওই জমি দখল করা হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার মেয়ে মেঘনাথ গুহঠাকুরতা ও তার স্বজনরা। ওই সংসদ সদস্য ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি। 

জানা যায়, বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি শহীদ বুদ্ধিজীবী জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ও তার চাচাতো ভাই প্রফুল্ল কুমার গুহের জমিতে প্রতিষ্ঠিত। ওই বিদ্যালয়ের পাশেই প্রয়াত প্রফুল্ল কুমার গুহের দুই ছেলে অনুপ কুমার গুহ ও পল্লব কুমার গুহের নামে রেকর্ড থাকা পাঁচ শতাংশ জমি ৩ জানুয়ারি বিকেলে বিদ্যালয়ের নামে দখলে নেওয়া হয়েছে। এ সময়ে বাধা দিলে স্থানীয় সাংসদ তাকে হুমকি-ধমকি দেন বলে অনুপ কুমার গুহ অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার কন্যা মেঘনা গুহঠাকুরতা সাংসদ শাহে আলমের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তুলে সম্প্রতি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘গতকাল বিকেল ৪.৩০ দিকে বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম (বানারীপাড়া-উজিরপুর) দাঁড়িয়ে থেকে আমার পাঁচ শতাংশ জমি, যাহার বাজারমূল্য কোটি টাকা, তা বালিকা বিদ্যালয়ের নামে দখল করে নিয়েছে। তিনি বর্তমানে বানারীপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। এই জমির অংশ থেকে দশমিক আট শতাংশ জমি আমরা বানারীপাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের জন্য সরকারকে দিয়েছি এবং ডিসি, বরিশাল সরকারের পক্ষে এই আট শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে। তার পূর্ব পাশে এই জমির অংশ পাঁচ শতাংশ জমি ছিল, যা তিন দিকে পাকা ওয়াল ছিল, ৩০-১৬ ফুট ছাদসহ পাকা স্থাপনা ছিল এবং একদিকে টিনের বেড়া ছিল, যা গতকাল ও আজকে ভেঙে দিয়ে দখলে নিচ্ছে। আমি বাধা দিলে সে কয়েকবার বলেছেন, এখান থেকে চলে যেতে, না হলে আমাকে মারবে। আমি এই দখল ও স্থাপনা ভাঙার ছবি তুললে তার লোকজন দিয়ে আমার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ছবিগুলো ডিলিট করে দেয়। দখলকৃত জমির পরিচয় ৪২ নং বানারীপাড়া মৌজায় ২৫৯ নং খতিয়ানের ৫২৫ নং দাগের অংশ। জমির পরিমাণ ৫ (পাঁচ) শতাংশ। জমির রেকর্ডীয় মালিক ১. অনুপ কুমার গুহ, ২. পল্লব কুমার গুহ।’ 

অনুপ কুমার গুহ বলেন, বালিকা বিদ্যালয়ের পাশে পৈতৃক সূত্রে মালিকানাধীন দুই ভাইয়ের ১৩ শতাংশ জমি ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন করার জন্য ২০২১ সালে সরকারের পক্ষে বরিশাল জেলা প্রশাসক আট শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে। বাকি পাঁচ শতাংশের উপরে একটি পাকা ভবন ছিল। যার সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়লে টিনের বেড়া দিয়ে আটকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে দুই ভাইয়ের মালিকানা– সংক্রান্ত একটি সাইনবোর্ডও ছিল।

অভিযোগের বিষয়ে সাংসদ শাহে আলম সাংবাদিকদের বলেন, অনুপ যে জমি নিজেদের বলে দাবী করছেন সেই জমি ইউনিয়ন পরিষদের। ১৯৭৭ সালে তার বাবা ভুয়া ডিক্রি করে ওই জমি তার নামে নিয়ে যান। বিদ্যালয়ের মূল ফটকের কাছে হওয়ায় শিক্ষক, অভিভাবক সবাই চায় জমিটা বিদ্যালয়ের থাকুক। এর সঙ্গে বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা জড়িত। জমির প্রকৃত মালিক হলে বাজারমূল্য অনুযায়ী বিদ্যালয় থেকে জমির মূল্য দেওয়া হবে। অনুপ শহীদ বুদ্ধিজীবী জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার আত্মীয় পরিচয় দিলেও তিনি ওই পরিবারের আত্মীয় নন।

এমএইচডি/আরএইচ