রাজধানীতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক সাফায়েত মাহবুব ফারাইজিকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলা তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার বিকেলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ৯ মার্চ পিবিআইকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ফারাইজির মা শামিমুন নাহার লিপি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
 
মামলার আসামিরা হলেন বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) তয়াছের জাহান, ভাটারা থানার উপপরিদর্শক মশিউর রহমান, ভিকটিমের বান্ধবী সুজানা তাবাসসুম সালাম, আফতাব, শাখাওয়াত, আসওয়াদ, বাড়ির মালিক কামরুল হক ও কেয়ারটেকার রিপন।

গুলশান বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে মুঠোফোনে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনার বিভাগের একজন এসির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে, বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?’

জবাবে ডিসি গুলশান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ফোনে কোনো কমেন্টস দেব না, নিতে চাইলে অফিসে এসে নিতে হবে।’

এ বিষয়ে জানতে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিহতের এক স্বজন ঢাকা পোস্টের কাছে অভিযোগ করেছেন,  ‘হত্যাকাণ্ডে’ গুলশান বিভাগের ডিসির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।  

মামলা দায়েরের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এটি একটি ভুয়া মামলা।’

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ফারাইজি বাংলাদেশে আসেন। দেশে আসার পর তিনি মা শামিমুন নাহার লিপির সঙ্গে সুজানা, আফতাব, শাখাওয়াত ও আসওয়াদকে পরিচয় করিয়ে দেন। 

মাঝে মধ্যেই ফারাইজির সঙ্গে তার বন্ধু সুজানা দেখা করতে বাসায় আসতেন। বাসায় তারা গোপনে নেশা করতেন। বিষয়টি জেনে ফারাইজির মা শামিমুন নাহার সুজানাকে তাদের বাসায় আসতে নিষেধ করেন।

এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে সুজানা ও তার দলবল বাসায় এসে মা-ছেলেকে গালিগালাজ করে এবং শারীরিকভাবে আঘাত করে। পরে ৯৯৯ এ কল দিলে পুলিশ আসে। তারা বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়।

গত ১০ ডিসেম্বর শামিমুন নাহার ও তার ছেলে গুলশানে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে আসামিরা তাদের ওপর আক্রমণ করে। এতে তারা আহত হন। পরে তারা ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন।

একই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশের বাড্ডা জোনের এসি তয়াছের জাহান ও এসআই মশিউর সুজানাকে ভিকটিমের বাসায় নিয়ে যান। তারা সুজানার সঙ্গে ফারাইজিকে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে বলেন। অন্যথায় ফারাইজি দেশে থাকতে পারবে না বলে হুমকি দেন।

ভুক্তভোগী ফারাইজি গত ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের অনুষ্ঠান পালন করতে বাসা থেকে বের হন। এ সময় তার সঙ্গে সুজানা, আফতাব, শাখাওয়াত ও আসওয়াদ ছিল। পরে তিনি আর বাসায় ফেরেননি। ফারাইজির কোনো হদিস না পেয়ে তার মা ভাটারা থানায় যান।

সেখানে এসি তয়াছের জাহানের কাছে সুজানার ঠিকানা জানতে চান তিনি। তখন এসি জানান, আসামির ঠিকানা তিনি জানেন না। এরপর ২৭ ডিসেম্বর ফারাইজির মায়ের কাছে ভাটারা থানা থেকে ফোন আসে। ওই ফোনে জানানো হয় তার ছেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

১ জানুয়ারি ময়নাতদন্ত শেষে মায়ের হাতে ফারাইজির মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

পরদিন ফারাইজির মা মরদেহ যে বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় সেখানে যান। কিন্তু বাড়ির মালিক কামরুল হক এবং কেয়ারটেকার রিপন তাকে বাসায় ঢুকতে না দিয়ে হত্যার হুমকি দেন। এরপর ৩ জানুয়ারি বাদী (ফারাইজির মা) ভাটারা থানায় মামলা করতে গেলে এসি তয়াছের জাহান ও এসআই মশিউর এ ঘটনায় মামলা না করার হুমকি দেন।

জেইউ/আরএইচ