আমাদের অতি পরিচিত একটি শারীরিক সমস্যা হলো হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ। চিকিৎসকেরা জানান, প্রেসার অতিরিক্ত বেড়ে গেলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনির সমস্যা ইত্যাদির কারণ হতে পারে। হাই প্রেসারের রোগীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজেদের সমস্যা বুঝতে পারেন না। এটি পরবর্তীতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

হাই প্রেসার কী?

স্বাভাবিকভাবে আমাদের হৃদপিন্ড ধমনীর মাধ্যমে যে পরিমাণ রক্ত সরবরাহ করে, ধমনী কোনো কারণে সরু হয়ে গেলে এই সরবরাহ ব্যবস্থার উপর চাপ পড়ে, আর এই চাপকেই বলা হয় উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসারয়। ২০১৭-২০১৮ সালের বাংলাদেশ জনমিতি স্বাস্থ্য জরিপে দেখা যায়, দেশের প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চার জনের মধ্যে একজন হাই প্রেসারে ভুগছেন। প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ যে কারও শরীরে রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০। এই চাপ ১৪০/৯০ এর চেয়ে বেশি হলে সেটি হাই প্রেসার হিসেবে ধরা যাবে।

লক্ষণ

* নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।

* মাথায় তীব্র ব্যথা।

* প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া।

* মাথা ঘোরানো।

* বুকে ব্যথা।

* চোখে ঝাপসা দেখা।

* অনিদ্রা।

* অল্পতেই অস্থিরতাভাব ও রেগে যাওয়া।

* বমি বমি ভাব।

* মাঝে মাঝে কানে শব্দ হওয়া।

কেন হয়?

* পরিবারে হাই প্রেসারে আক্রান্তের ইতিহাস থাকলে।

* অতিরিক্ত ওজনের কারণে।

* শারীরিক ও মানসিকভাবে চাপের কারণে।

* দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যার কারণে।

* বেশি লবণ খেলে।

* ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে।

* কায়িক পরিশ্রম না করলে।

হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। শরীরে রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অন্যান্য অসুখ থেকে দূরে থাকাও সহজ হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক হাই প্রেসার কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায়-

মানসিক চাপ কমান

মানসিক চাপের কারণে ক্ষতি হয় আমাদের শরীরেরও। এটি আমাদের শরীরের পেশিগুলোকে চাপের মুখে ফেলে। যে কারণে বেড়ে যেতে পারে রক্তচাপ। তাই মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। যেকোনো সমস্যায় ঠান্ডা মাথায় সমাধান খুঁজে বের করুন। মানসিক চাপ পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নয়, তবে শান্ত পরিবেশে মেডিটেশন করলে এটি অনেকটাই কমানো যায়।

ওজন নিয়ন্ত্রণ

হাই প্রেসারের অন্যতম কারণ হলো অতিরিক্ত ওজন। এছাড়াও কোমরের চারপাশে থাকা ভিসারাল ফ্যাট নামক অতিরিক্ত চর্বিও হতে পারে এর কারণ। সেজন্য পুরুষের কোমরের পরিমাপ ৪০ ইঞ্চির কম এবং নারীর ক্ষেত্রে ৩৫ ইঞ্চির কম রাখতে হবে। ওজন কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর সব উপায় মেনে চলতে হবে।

অতিরিক্ত লবণ খাবেন না

অনেকেরই অভ্যাস থাকে খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার। আবার একথাও প্রায় সবাই জানেন যে, অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। খাবারে সঠিক মাত্রায় লবণ ব্যবহার করলে তা হাই প্রেসারের ঝুঁকি কমায়, এমনটাই দেখা গেছে বিভিন্ন গবেষণায়। আমাদের দৈহিক কার্যক্রম‌ পরিচালনার জন্য প্রতিদিন মাত্র ৫০০ মিলিগ্রাম লবণ প্রয়োজন হয়। ডায়েটারি গাইডলাইনস ফর আমেরিকানস এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন ২,৩০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়। এটি প্রায় এক চা চামচের সমান।

খাবারে পরিবর্তন আনুন

খাবারের তালিকায় যদি অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার থাকে তবে হাই প্রেসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সেইসঙ্গে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার খেলেও বাড়তে পারে হাই প্রেসার। তাই খাবারের তালিকায় পরিবর্তন আনা জরুরি। সবচেয়ে ভালো হয় একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খাদ্যতালিকা তৈরি করলে।

নিয়মিত শরীরচর্চা করুন

নিয়মিত শরীরচর্চা ও পরিশ্রমে নিয়ন্ত্রণে থাকে রক্তচাপ। ফলে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে, ওজন থাকে নিয়ন্ত্রণে। বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন অন্তত দুইবার পাঁচ মিনিট করে যেকোনো ধরনের হালকা ব্যায়াম, ইয়োগা বা মেডিটেশন এবং হাঁটাহাঁটি করার পরামর্শ দেন। চেষ্টা করুন এই নিয়ম মেনে চলার।

ধূমপান ও মদ্যপান বাদ দিন

এই দুই অভ্যাসের কোনোটাই উপকারী নয়, বরং অনেকগুলো ক্ষতির কারণ। প্রতিবার ধূমপানের সময় কয়েক মিনিটের জন্য অস্থায়ীভাবে রক্তচাপ বেড়ে যায়। যে কারণে দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এদিকে অতিরিক্ত মদ্যপানও উচ্চ রক্তচাপসহ আরও অনেক সমস্যা ডেকে আনে। তাই এই দুই বদ অভ্যাস থাকলে তা আজই বাদ দিন।

হেলথলাইন.কম অবলম্বনে