লিভার সুস্থ না থাকলে শরীরও সুস্থ থাকবে না। কারণ এটি শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। খাবার হজম করার পাশাপাশি শরীর থেকে বর্জ্যপদার্থ করে দেওয়ার কাজ করে এটি। ফলে সুস্থ থাকে শরীর। কিন্তু কোনো কারণে লিভার তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারালে শরীর তো খারাপ হয়ই, এমনকী মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যায়! লিভার খারাপ হতে শুরু করলে তার লক্ষণ ফুটে ওঠে শরীরে। সেসব লক্ষণ দেখে বুঝতে পারা যায় যে আপনার লিভার নষ্ট হওয়ার পথে। চলুন জেনে নেওয়া যাক-

জন্ডিস

জন্ডিসে আক্রান্ত হলে চোখের সাদা অংশ ও ত্বক হলুদ হয়ে যায়। সেইসঙ্গে প্রস্রাবের রংও গাঢ় হলুদ রঙের হয়ে থাকে। এগুলো লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার লক্ষণ। সুস্থ অবস্থায় লিভার বিলিরুবিন শোষণ করে পিত্তে রূপান্তরিত করে, এটি অংশ নেয় হজম প্রক্রিয়ায়। এরপর বাকি অংশ বর্জ্য আকারে মলের সঙ্গে বের হয়ে যায়। লিভার যখন বিলিরুবিনকে শোষণ করতে পারে না তখন জন্ডিস দেখা দেয়।

ত্বকে চুলকানি

লিভারের যেসব স্বাভাবিক কাজ, সেগুলো ব্যহত হলে উচ্চ মাত্রার পিত্ত লবণ জমতে থাকে ত্বকের নিচে। যে কারণে শরীরে দেখা দেয় চুলকানি। ক্ষতিগ্রস্ত লিভারের কারণেই বেশিরভাগ ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। তবে সব ধরনের চুলকানির কারণ কিন্তু পিত্ত লবণ নয়। অন্যান্য কারণেও চুলকানির মতো সমস্যা হতে পারে। তাই ত্বকে চুলকানি দেখা দিলে আগে এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে।

খাবারের প্রতি অনীহা

যদি আপনার খাবারের প্রতি অনীহা দেখা দেয় তবে সতর্ক হোন। কারণ এটি হতে পারে লিভারের সমস্যার লক্ষণ। খাবার হজমে সাহায্য করে লিভারে উৎপন্ন পিত্ত রস। লিভার স্বাভাবিকভাবে কাজ না করলে তখন হজমে সমস্যা দেখা দেয়। যে কারণে ক্ষুধা কমে যায়। ফলস্বরূপ বমি বা বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়ার মতো সমস্যা শুরু হয়।

রক্তপাত

কোথাও কেটে-ছড়ে গেলে যদি ক্ষত নিরাময় হতে বেশি সময় লাগে তবে বুঝবেন, লিভারে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ শরীরের কোথাও কেটে-ছড়ে গেলে নির্দিষ্ট প্রোটিনের অভাবে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না বা ঘা হয়। আর এই প্রোটিন তৈরি হয় লিভারে। লিভার যদি স্বাভাবিক কাজ না করে তখন প্রোটিন তৈরি ব্যহত হয়। লিভারের সমস্যায় ভুগলে রক্তবমি হতে পারে বা মলের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে।

মনোযোগের অভাব

লিভারের অন্যতম কাজ হলো আমাদের শরীরের দূষিত পদার্থগুলো বের করে দেওয়া। কিন্তু কোনো কারণে সেই দূষিত পদার্থ ফিল্টার করতে না পারলে শরীরের অন্য সব কাজও ব্যহত হয়। তখন শরীরে টক্সিন জমতে থাকে। এটি প্রভাব ফেলে মানসিক স্বাস্থ্য ও স্মৃতিশক্তির ওপরেও। ফলে দেখা দেয় স্মৃতিশক্তি হ্রাস, বিভ্রান্তি, খিটখিটে মেজাজ, একাগ্রতার অভাব। এ ধরনের লক্ষণ দেখলে তাই সতর্ক হোন।

অন্যান্য লক্ষণ

লিভার নষ্ট হওয়ার রয়েছে আরও কিছু লক্ষণ। পাঁজরের একটু নিচে, পেটের ডান দিকে ব্যথা হলে সতর্ক হোন। এটি হতে পারে লিভারের সমস্যার অন্যতম লক্ষণ। এছাড়াও যদি বমি বমি ভাব, পেট ফুলে যাওয়া, সব সময় আচ্ছন্ন থাকা, কাঁপুনি, বিভ্রান্তি ইত্যাদি সমস্যা হয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।