১৮ মাসের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে দেরিতে কথা বলার লক্ষণ সব সময় স্পষ্ট হয় না। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে গেলে তারা আরও সময় অপেক্ষা করতে বলতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সময়ের সঙ্গে ঠিক হয়ে যায়। তবে যদি মনে হয় যে আপনার সন্তান কথা বলতে যথেষ্ট দেরি করছে তবে উপেক্ষা না করাই ভালো। 

শিশুর দেরিতে কথা বলার বিষয়টি যদি আগেই বুঝতে পারেন তবে তাকে সাহায্য করা আপনার জন্য সহজ হবে। শিশুর বয়স যখন প্রায় দুই বছর হয় তখন তারা ছোট ছোট শব্দ, অঙ্গভঙ্গি এবং এক বা দুই-শব্দের প্রশ্ন বলতে শুরু করে। এর মাধ্যমে তারা অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করে। 

২ বছর বয়সী শিশুর যা যা করতে সক্ষম হওয়া উচিত

এই সময়ে শিশু তার চাহিদা জানাতে সহজ বাক্যাংশ ব্যবহার করে। এই বাক্যাংশগুলোর বেশিরভাগই ‘আরো দুধ’, ‘কলা দাও’ ইত্যাদির মতো অনুরোধ হিসাবে আসে। তারা ‘বাইরে যাও?’, ‘বাবা যাবে?’ এর মতো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে এক বা দুটি শব্দ ব্যবহার করতে সক্ষম হতে পারে।

* ২ বছর বয়সী শিশুর প্রতিদিন প্রায় ৫০ বা তার বেশি শব্দ ব্যবহার করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

* তারা সহজ নির্দেশাবলী, আদেশ অনুসরণ করতে পারে এবং প্রশ্ন বুঝতে পারে।

* পিতামাতা এবং পরিবারের সবাই কী বলে তা বুঝতে সক্ষম হওয়া উচিত।

যদি আপনার বাচ্চা তার বয়স অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কথা বলতে না পারে, তাহলে আপনাকে স্পিচ থেরাপিতে সাহায্য করতে হবে। স্পিচ থেরাপি দিয়ে তাদের ভাষা বিকাশে সহায়তা করতে পারে। শিশুর দেরিতে কথা বলার জন্য কিছু ব্যায়াম তাদের প্রতিদিনের কথায় আরও শব্দ শিখতে এবং ব্যবহার করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে। শিশুর দেরিতে কথা বলার সমস্যা দূর করার জন্য কিছু টিপস রয়েছে। এগুলো শিশুকে দ্রুত কথা বলতে সাহায্য করবে-

সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন

মা-বাবা মনে করেন, শিশুর সামনে টিভি চালু রাখলে বা তাকে একটি আইপ্যাড দিয়ে বসিয়ে রাখলে সেগুলো তাকে কথা বলতে শেখাবে। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য। সেখানে বলা হয়েছে, এটি মোটেও সঠিক নয়। শিশুর ভাষা বিকাশের জন্য তার সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। তাই যখনই সুযোগ পান, তার সঙ্গে কথা বলুন। তাকে গল্প বলুন বা পড়ে শোনান। তাকে কোনো গল্প পড়ে শোনানোর সময় সে খেয়াল করে আপনি শব্দগুলো কীভাবে বলছেন। এভাবে তারা নতুন নতুন শব্দ শিখে বলতে শুরু করবে। ছোট গল্পসহ ছবির বই কিনে দিন যা আপনার সন্তানকে কৌতুহলী করবে। ঘুমের আগে তাদের গল্প পড়ে শোনান। এতে তাদের কল্পনাশক্তিও বৃদ্ধি পাবে।

আপনার মতো করে কথা বলতে বলুন

শিশুকে বলুন, আপনার বলা কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করতে। বল দিয়ে খেলার সময় বল নিয়ে তার দিকে ইশারা করুন এবং বলুন, ‘বল। বল ছুঁড়ে দাও’। তাকেও তেমনি বলতে বলুন তারপর আপনি বল নিক্ষেপ করন। এভাবে খেলার ছলে কথা নকল করতে বলুন। পুনরাবৃত্তিকে ভয় পাবেন না। শিশুরা পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে শেখে। আপনি যত বেশি সাধারণ শব্দ বা দুই শব্দের বাক্যাংশ পুনরাবৃত্তি করবেন, আপনার সন্তানের সেই শব্দ এবং বাক্যাংশগুলো শেখার সম্ভাবনা তত বেশি হবে।

দীর্ঘ বাক্যাংশ বা বাক্য ব্যবহার করুন

আপনার নিজের কাজ বা কথা বর্ণনা করার পর, সন্তানের সারাদিনের কাজ সম্পর্কে জানতে চাইবেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি তাদের খেলনা, রঙ অথবা, চেয়ার, টেবিল, চামচ, বাটি ইত্যাদি তারা যে জিনিসগুলো ব্যবহার করছে সেগুলোর নাম বলতে বলুন। সব সময় সে  যে বাক্যগুলো ব্যবহার করছে তার থেকে সামান্য দীর্ঘ বাক্যাংশ বা বাক্য ব্যবহার করতে বলবেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার সন্তান বলে, ‘জুস’, তাকে বলুন ‘জুস’? ‘তুমি কি আরো জুস চাও?’ তাকে বলতে বলুন ‘হ্যাঁ, আমি আরও জুস চাই’।

শব্দ ভাণ্ডার বাড়ান

এটি আপনার সন্তান যা বলে বা অঙ্গভঙ্গি করে তার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করবেন। তারা যা বলে তা পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করুন এবং এতে এক বা দুটি অর্থপূর্ণ শব্দ যোগ করুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার সন্তান বলে ‘বল’, আপনি আপনার সন্তানকে ‘বল চাই’ বা ‘থ্রো বল’ বা ‘আমার বল’ বলতে পারেন। শিশু যে বস্তুর দিকে ইশারা করছে বা তার দিকে পৌঁছাচ্ছে তার নামও দিতে পারেন। সন্তানের শব্দভাণ্ডার বাড়াতে একই বস্তুর উল্লেখ করতে একাধিক শব্দ ব্যবহার করতে পারেন। তবে খুব বড় বা জটিল শব্দ ব্যবহার করবেন না।

সন্তানের জন্য গান করুন

আপনাকে খুব ভালো গায়ক হতে হবে না, সুরেলা গান ও লাগবে না, শিশুর জন্য সহজ সাধারণ ছড়াগান গাইতে পারেন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে সন্তানের সঙ্গে গান করলে তা তাদের কথা বলার ক্ষমতা বাড়াতে পারে। মজার বিষয় হলো, মস্তিষ্কে গান গাওয়া এবং কথা বলার কেন্দ্রগুলো আলাদা। এমন উদাহরণ রয়েছে যেখানে একটি শিশু সম্পূর্ণ বাক্য গঠন করার অনেক আগেই একটি ছড়াগান গাইতে পারে।

তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করুন

উন্নতি যতই ছোট হোক না কেন যদি তারা একটি নতুন শব্দ শিখে থাকে বা ব্যবহার করে থাকে তবে তাদের প্রশংসা করতে ভুলবেন না। মৌখিক ইতিবাচক শক্তিবৃদ্ধি একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে তাদের ব্যক্তিত্ব গঠনে একটি দীর্ঘ পথ নিয়ে যেতে পারে। সুতরাং যদি তারা একটি নতুন শব্দ ব্যবহার করার সময় বা একটি সম্পূর্ণ বাক্য গঠন করার সময় সামান্য বিচলিতও হয়, তাদের প্রচেষ্টার জন্য তাদের প্রশংসা করতে ভুলবেন না।

সর্বোপরি শিশুর সঙ্গে সময় কাটানো অপরিহার্য। স্বাভাবিক খেলা ছাড়াও, আপনার সন্তানের দৈনন্দিন রুটিনে এই সহজ কাজগুলো যোগ করুন। দেরিতে কথা বলা সবসময় অটিজম এবং অন্যান্য নিউরোডেভেলপমেন্টাল ব্যাধি এবং শ্রবণজনিত ব্যাধির লক্ষণ নাও হতে পারে। তবে সতর্ক থাকার জন্য শিশুর কথা বলতে দেরি হলে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।