মোবাইল ফোন উপকারী সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এই উপকারী জিনিসটির ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে এটি আসলেই উপকারী থাকবে কি-না! কারণ অনেকে ফোন নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকেন যে তা এক সময় আসক্তির পর্যায়ে চলে যায়। কম বয়সে হাতে স্মার্টফোন পেয়ে তাতেই মজে যায় অনেক শিশু-কিশোর। শুধু তাদের ক্ষেত্রেই নয়, এটি হতে পারে যেকোনো বয়সীর ক্ষেত্রেই। 

স্মার্টফোনের দুনিয়ায় বুঁদ হয়ে অনেকেই রাখছেন না বাস্তব দুনিয়ার খবর। কাছের মানুষগুলোকে দূরে ঠেলে দূরের মানুষগুলোর পেছনে ছুটছেন অন্ধের মতো। এই দুই দুনিয়ার সঙ্গে তাল না মেলাতে পেরে হোঁচট খাচ্ছেন অনেকে। সেখান থেকে বাড়ছে বিষাদ। বাড়ছে মানসিক চাপও। কখনো কখনো সেই চাপ থেকে বের হতে প্রয়োজন পড়ছে কাউন্সিলিং এর।

তবে কাউন্সিলিং করার জন্য প্রথমেই যে বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে এমন নয়। বাড়ির সদস্যরা এক্ষেত্রে একে অপরের সহযোগী হতে পারেন। আবার চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে বাড়িতে এই কাজ করতে পারেন। কয়েকটি সহজ উপায় মেনে চললে স্মার্টফোনের আসক্তি থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব।

আপনি যদি সবদিক সুন্দরভাবে সামলাতে না পারেন তবে বাড়বে মানসিক চাপ ও অশান্তি। এরকমটা হলে প্রথমেই যা করতে হবে তা হলো, কাজের সময় ও ব্যক্তিগত সময় আলাদা করে নেয়া। আপনার কাছের মানুষ, সহকর্মী, বন্ধু সবাইকে জানান যে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের পর আপনাকে সোস্যাল মিডিয়া কিংবা ফোনে পাওয়া যাবে না। 

যদি প্রথমেই সব যোগাযোগ ছিন্ন না করতে পারেন তবে আলাদা একটি ফোন রাখুন। যে ফোনের মাধ্যমে কেবল জরুরি প্রয়োজনে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। 

যদি অবসরের পুরোটা সময় জরুরি টেক্সট বা মেইল এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না হয় তাহলে সেসব একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে চেক করার অভ্যাস করুন। কোনোভাবেই অবসরের পুরোটা সময় সেসবের পেছনে ব্যয় করবেন না।

যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা টেক্সটে বা ফোনে না করে সামনাসামনি দেখা করে করার চেষ্টা করুন। কারণ এতে অল্প সময়ে বেশি কাজ হয়। অর্থাৎ ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা কমে এবং আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সম্পর্ক যাদের সঙ্গে, তাদের ক্ষেত্রে অনলাইনে যোগাযোগের থেকেও অনেক বেশি জরুরি দেখা করা, সম্ভব হলে তাদের বাড়িতে যাওয়া-আসা করা। এতে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে। মন খুলে গল্প করা যায়। নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে হয় না।

অনেকে পরিবার বা প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটালেও মন পড়ে থাকে ফোনের কাছে। আড্ডা বা গল্পের ফাঁকে ফাঁকে স্মার্টফোনে ব্রাউজিং চলতে থাকে। এমনটা করা যাবে না একেবারেই। যতটুকু সময় পরিবার-প্রিয়জনের সঙ্গে থাকবেন, স্মার্টফোন দূরে রাখুন। 

নেট ঘাঁটাঘাঁটি করে পড়াশোনা করার অভ্যাস খারাপ নয়। সেইসঙ্গে অভ্যাস থাকুক বই পড়ারও। সময় পেলেই বইয়ের পাতায় চোখ বোলান।

ঘুমাতে গিয়ে বিছানায় শুয়ে ফোন ঘাঁটার অভ্যাস প্রায় সবারই। এই অভ্যাস একদমই বাদ দিতে হবে। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ঘণ্টাখানেক আগে সব রকম গ্যাজেট দূরে সরিয়ে রাখুন। ঘুম না আসার সমস্যা দূর হবে দ্রুত।

ছুটির দিনটিতে বাসায় বসে না ঝিমিয়ে বাইরে থেকে ঘুরে আসুন। প্রকৃতির সান্নিধ্যে গেলে মন আপনাআপনিই ভালো হয়ে যাবে। 

এইচএন