ফুল ফুটুক আর নাই বা ফুটুক; বসন্ত কিন্তু এসেই গেছে। ক্যালেন্ডারের পাতায় তো বটেই- প্রকৃতিতেও এখন সর্বত্র পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। দখিনা হাওয়ায় মন-প্রাণ জুড়ানোর পাশাপাশি আপনার ত্বকেও কিন্তু এ পরিবর্তনের রেশ দৃশ্যমান। কারণ প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বসন্তে ত্বকেও দেখা যায় পরিবর্তন। তাই এসময় বাড়তি সচেতনতা আবশ্যক, চাই ত্বকের প্রতি বাড়তি একটু যত্নও।

আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয়ের মাঝে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের ত্বক। তাই যেকোনো প্রাকৃতিক পরিবর্তনেই ত্বকের ওপর প্রভাব পড়তে দেখা যায়। বসন্ত ঋতু হলো গ্রীষ্ম ও শীতের মাঝে সংযোগসেতু। শীতের আর্দ্রতা বসন্তে এসে কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও গ্রীষ্ম-বর্ষার মতো পুরোপুরিভাবে অতটা বৃদ্ধি পায় না। তাপমাত্রা আবার হুট করে কিছুটা বেড়েও যায় এসময়ে। সামগ্রিকভাবে শীতের সময়ে ত্বকে যে প্রভাব দেখা যায়; বসন্তে এসে তার অনেকাংশেই বিদ্যমান থেকে যায়।

বসন্তে এসেও তাই ত্বকের শুষ্কভাব বিরাজমান থাকে। একে বলা হয় জেরোসিস। বৃদ্ধি পায় সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বা খুশকির প্রাদুর্ভাব। ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দেখা যায় সেনাইল জেরোটিক প্রুরাইটাস যেখানে শুষ্ক ত্বকে চুলকানির প্রবণতা ঘটতে পারে। অনেকসময় ত্বকে স্কেলিং বা মরা চামড়া দৃশ্যমানভাবে ঝরে পড়তে পারে। দেখা দিতে পারে জেরোটিক একজিমা। চুল পড়ার প্রবণতাও প্রচুর বৃদ্ধি পায় বছরের এ সময়টাতে। বসন্তে সামগ্রিকভাবে ছত্রাকজনিত ত্বকের সংক্রমণও বেশ বৃদ্ধি পায়। তবে ব্রণের সমস্যা এসময় কিছুটা কম থাকে। গ্রীষ্মকাল এলে ব্রণের এ সমস্যা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। এছাড়া অন্যান্য যেসব রোগের প্রভাব ত্বকের ওপরেও পড়ে; সেরকম কিছু রোগের সংক্রমণ এসময় বেড়ে যায়। যেমন বিভিন্ন ধরণের র‌্যাশ, চিকেন পক্স প্রভৃতি।

একটু বাড়তি সতর্কতাই ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে এসময়ে। বিশেষ করে কর্মজীবী, শিক্ষার্থী, বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বেশি দরকার ত্বকের যত্ন নেওয়া; কারণ সাধারণভাবেই বয়স্ক ব্যক্তিদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বকে বেশ শুষ্কভাব পরিলক্ষিত হয়।আবার ঘরের বাইরের আবহাওয়ার প্রভাব আমাদের ত্বকে বেশি পড়ায় কর্মজীবী ব্যক্তিদের ত্বকের যত্ন নেওয়া বেশি প্রয়োজন। শুষ্ক ত্বকের জন্য প্রতিদিন ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল, গ্লিসারিন, লিকুইড প্যারাফিন, ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। বসন্তে শুষ্কতার পাশাপাশি বাতাসে প্রচুর ধুলোবালিও উড়ে বেড়ায়। তাই খুশকির প্রবণতাও অনেক বৃদ্ধি পায়। এজন্য বিভিন্ন এন্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পুও ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন ২% কিটোকোনাজল অথবা কিটোকোনাজল ও জিংক পাইরিথিওনের মিশ্রণের মেডিকেটেড শ্যাম্পু। প্রথমে সপ্তাহে দু’বার করে, পরবর্তীতে সপ্তাহে একবার এসব শ্যাম্পু ব্যবহার করা যায়। ছত্রাকজনিত সংক্রমণ হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ছত্রাক বিরোধী ওষুধ সেবন করতে হবে। নিয়মমতো প্রতিদিন ওষুধ সেবন করলে এ ধরনের সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ সময়ে বাড়তি যত্ন

১. বাইরে থেকে এসে ভালোভাবে প্রচুর পানি অথবা ক্লিনজিং লোশন বা ফেস-ওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করা প্রয়োজন।

২. ত্বককে যতটা সম্ভব ধুলোবালি থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।

৩. বাইরে গেলে সরাসরি যেন ত্বকে রোদ না লাগে সেজন্য ছাতা ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪. মুখ, ঘাড় ও হাতে সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে।

৫. প্রচুর পানি পান করতে হবে।

৬. নিয়মিত গোসল ও ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। যাদের হাতের চামড়া অত্যধিক রুক্ষ, তারা ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার না করে ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সাবান ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।

৭. এই সময় স্ক্র্যাব করাটাও জরুরি। ত্বক ভালো রাখতে ও ত্বকের দাগ-ছোপ দূরে রাখতে সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন স্ক্র্যাব ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া ত্বকের যত্ন নিতে টোনার বা সিরামও ব্যবহার করতে পারেন। তবে টোনারটি যেন কেমিক্যালবিহীন হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।

৮. ভালো ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করলে এ সময়ে ত্বক নরম থাকবে এবং ত্বক রুক্ষও হবে না। সেইসঙ্গে ভিটামিন এ, সি ও ই সমৃদ্ধ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট জাতীয় ওষুধও সেবন করা যেতে পারে।

৯. যেহেতু প্রকৃতিতে শীতের কিছুটা আবহ এখনো বিদ্যমান, তাই শীতের মতো এ সময়েও ঠোঁট ফেটে যাওয়া বা শুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এক্ষেত্রে ভালো মানের লিপবাম ব্যবহার করতে পারেন।

একটুখানি সচেতনতা আর একটু যত্নই পারে আপনার ত্বককে সজীব ও সতেজ রাখতে। নিয়ম মেনে চললে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে সহজেই আপনার ত্বক খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। সুস্থ থাকুক আপনার ত্বক, যত্নে থাকুন আপনিও। উপভোগ করুন ঋতুরাজ বসন্ত।

এইচএন/এএ