আদা হলো এমন একটি মসলা যা প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায়। শুরুর দিকে এশিয়ায় জন্মালেও এটি পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সেইসঙ্গে অর্জন করেছে জনপ্রিয়তাও। এটি আমাদের প্রায় সবার বাসায়ই থাকে। অসংখ্য খাবার, পানীয় ও ডেজার্ট তৈরিতে আদা ব্যবহার করা হয়। ভেষজ উপকারিতা থাকার কারণে এটি আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতেও কাজ করে।

বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ আদার নিরাময়ক্ষমতার স্বাক্ষী। আদা কাঁচা, গুঁড়া করে, রান্না করে নানাভাবেই খাওয়া যায়। এই মসলা কিছু পরিচিত অসুখের ঘরোয়া সমাধান হিসেবেও কাজ করে। প্রতিদিন আদা খেতে শুরু করলে কী হতে পারে? এটি অতিরিক্ত খাওয়া কি ক্ষতিকর? চলুন জেনে নেওয়া যাক

অ্যাসিডিটি দূর করে

আপনার যদি বুকে জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা থাকে তাহলে নিশ্চয়ই জানেন যে এটি কতটা অস্বস্তিদায়ক। পেটের অ্যাসিড খাদ্যনালীতে উঠে এলে এই সমস্যা দেখা দেয়। যে কারণে বুকে ও গলায় জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হয় যা কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু খাবার, অ্যালকোহল বা জেনেটিক কারণে এই সমস্যা হতে পারে। অ্যাসিডিটি দূর করার ওষুধ কাজ না করলে কী করবেন? এক্ষেত্রে কাজে আসে আদা। যদি আপনার ঘন ঘন অর্থাৎ সপ্তাহে দুইবার বা তার বেশি অ্যাসিডিটির সমস্যা হয় তাহলে আদা খান। এতে উপশম সহজ হবে। 

আদা খেলে তা অতিরিক্ত অ্যাসিডিটির উৎপাদন কমিয়ে পেটকে আরাম দেয়। বুকে ও গলায় জ্বালাপোড়া হলে তা দূর করার জন্য কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে পারেন। অথবা চা ও মধুর সঙ্গে আদার রস মিশিয়েও খেয়ে নিতে পারেন। এতে মুক্তি পাওয়া সহজ হবে। এভাবে প্রতিদিন খেলে অ্যাসিডিটির সমস্যা বিদায় হতে সময় নেবে না।

ওজন কমাতে কাজ করে

ওজন কমানোর জন্য জিম বা ডায়েট করা কঠিন কাজ নয়? এক্ষেত্রে আদা খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে আছে জিঞ্জেরল এবং শোগাওল নামক দুই উপাদান। এই দুই উপাদান শরীরের জৈবিক ক্রিয়াকলাপে সাহায্য করে। এগুলো সঠিক বিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে এবং শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। খাবার তৈরিতে আদার গুঁড়া বা আদা বাটা ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে খেতে পারেন কাঁচাও। অথবা প্রতিদিন সকালে উঠে খালি পেটে আদা-পানি পান করতে পারেন। তবে কেবল আদা খেলেই ওজন কমবে না, সেইসঙ্গে আপনাকে সঠিক খাবার খেতে হবে ও পর্যাপ্ত ব্যায়াম করতে হবে। 

মর্নিং সিকনেস দূর করে

গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে প্রথম তিন মাস মর্নিং সিকনেস দেখা দিতে পারে। বারবার এরকম বমি বা বমি বমি ভাব হলে তা আপনাকে আরও ক্লান্ত করে দিতে পারে। সেইসঙ্গে অস্বস্তি তো থাকেই। সামান্য আদা চিবিয়ে খেলে এ ধরনের সমস্যা অনেকটাই দূর হয়। তবে আদা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন। কারণ গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত আদা খেলে তা মিসক্যারেজের কারণ হতে পারে। 

অনেকের গাড়িতে উঠলে বা সমুদ্রে গেলে বমি বমি ভাব হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা দূর করতেও কাজ করে আদা। কেমোথেরাপি নিচ্ছেন এমন রোগীদের ক্ষেত্রেও বমি বা বমি বমি ভাব দূর করতে কাজ করে এই উপকারী মসলা।

ক্যান্সার দূরে রাখে

আমরা এমন একটি পৃথিবীতে বাস করছি যেখানে জীবন ধ্বংসকারী একটি রোগ হিসেবে রয়েছে ক্যান্সার। আদা নিয়ে অনেক গবেষণায় উঠে এসেছে যে এটি কিছু ক্যান্সারের মূল ধ্বংস করতে পারে। ৬-শোগাওল আদার এমন একটি উপাদান যা স্তন ক্যান্সার কোষের মূল কারণকে নির্মূল করতে পারে। আদা খেলে স্তন ক্যান্সারের স্টেম সেল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় বা সেগুলো বৃদ্ধি কমে আসে।

ইনফেকশনের ভয় কমায়

আদায় থাকা জিঞ্জেরল নামক উপাদান ইনফেকশনের আশংকা দূর করার জন্য পরিচিত। এই উপাদান নিরাময় প্রক্রিয়া দ্রুত করার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়তে দেয় না। আদা খেলে কিছু ইনফেকশনের ভয় দূর হয়। জিনজিভাইটিস এবং শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ তার মধ্যে অন্যতম। সাধারণ কিছু ইনফেকশন এবং ভাইরাসের ক্ষেত্রে আদার ব্যবহার খুবই পরিচিত যেমন ঠান্ডা-কাশি। প্রতিদিন অন্তত দুই-তিন কাপ গরম আদা-পানি খেলে তা ফ্লু দূর করতে দ্রুত কাজ করবে। বেশি উপকারিতা পেতে চাইলে এর সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।

সেলফআপ.কম অবলম্বনে