ভাত, ডালের মতো আলু আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকার অংশ। একে সুস্বাদু, তার ওপর বেশ সহজলভ্য। ভাতের বিকল্প খাদ্য হিসেবেও পরিগণিত হয় শর্করা জাতীয় এই সবজি। আলু দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের খাবার রান্না হয়। মাছ, মাংস ও অন্যান্য সবজির সঙ্গে আলু রান্না হয় বাঙালি হেঁশেলে। আলুতে রয়েছে ফাইবার, মিনারেল ও ভিটামিন। নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম এটি। কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারের সহজলভ্যতার কারণে অনেকে আলু খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে আলু খেলে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায়। আলু খেলে কঠিন রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব।  

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আলু। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোডিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এর সঙ্গে পটাসিয়ামযুক্ত খাবারও খেতে হবে। আলুর মধ্যে সোডিয়াম ও পটাসিয়াম উভয়ই রয়েছে। তাই চিকিৎসকরা রক্তচাপের রোগীদের সবসময়ই আলু খাওয়ার পরামর্শ দেন। 

হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ করে

আলুতে খাবারের যেসব উপাদান রয়েছে সেসবের মধ্যে ফাইবার, পটাসিয়াম, ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি-৬ অন্যতম। এসব উপাদানসমৃদ্ধ খাবার খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা গেলে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে। হৃদরোগে আক্রান্ত মানুষের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় আলু রাখা উচিত। 

হাড়ের ক্ষয় থেকে সুরক্ষা

আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক এসব উপাদান হাড়ের গঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আলুতে এসব থাকার কারণে হাড়ের ক্ষয় রোগ দূর হয়ে যায়। এছাড়া আলু শরীরের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে। বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েদের আলু খাওয়া উচিত। আলুতে আরও যে উপাদান রয়েছে তা হলো ফসফরাস। এটি অস্টিওপরোসিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। 

ক্যান্সার থেকে মুক্তি

ডিএনএ থেকে তৈরি ফোলেটের মাধ্যমে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস হয়ে যায়। আলুতে এই উপাদান অধিক রয়েছে। এছাড়া আলুতে থাকা ফাইবার কোলন ক্যান্সার থেকে নিরাপদ রাখে। নিয়মিত আলু খেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। 

কিডনিতে পাথর থেকে মুক্তি

হজম ক্ষমতা ও পাচনতন্ত্র সচল থাকলে শরীরের পানির পরিমাণ সঠিক থাকে। নিয়মিত আলু খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিয়মিত আলু খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ভয় থাকে না। 

হজম ক্ষমতা বাড়ায়

ফাইবার শরীরের জন্য উপকারী। এটি হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে প্রতিদিন তারা আলু খেলে এর দ্রুত সমাধান করা যাবে। নিয়মিত আলু খেলে পাচনতন্ত্র ভালোভাবে চলতে পারে। 

দাঁতের সমস্যা দূর করে

দাঁত বা মাড়ির সমস্যার জন্য ভিটামিন সি বেশ উপকারী। আলুতে যেহেতু ভিটামিন সি রয়েছে সেহেতু দাঁতের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নিয়মিত আলু খেলে আরোগ্য লাভ করতে পারেন। দাঁতে ব্যথা বা অন্য যে কোনো সমস্যার জন্য চিকিৎসকরা রোগীদের আলু খাওয়ার পরামর্শ দেন। 

পেটের সমস্যা থেকে রেহাই দেয়

পেটের নানা রকম সমস্যা থাকতে পারে। ডায়রিয়া, আমাশয় বা হজম সমস্যা দেখা দিলে আলু সেদ্ধ করে খাওয়া যায়। এতে পেটের সমস্যা থেকে দ্রুত রেহাই পাওয়া সম্ভব। ডায়রিয়া ও আমাশয়ের রোগীদেরকে চিকিৎসকরা সবসময় আলু খেতে উদ্বুদ্ধ করেন। 

শরীর ফুলে যাওয়া থেকে মুক্তি

পর্যাপ্ত ফাইবার ও এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে আলু শরীরের ইলেক্ট্রোলাইসিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় আলু থাকলে শরীর, হাত, পা বা অন্য কোনো অংশ ফুলে যাওয়া থেকে অনায়াসে মুক্তি পাওয়া যায়। 

রোগ প্রতিরোধে সহায়ক

সাধারণ আলু এবং মিষ্টি আলুতে প্রচুর ভিটামিন এ ও এন্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। নিয়মিত আলু খেতে থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। বিশেষ করে কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েদের আলু খাওয়ার প্রয়োজন অনেক বেশি। কারণ যেকোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি তাদেরই। 

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

সঠিকভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে খাবারের তালিকায় আলু নিতে কখনোই ভুলে যাওয়া যাবে না। এতে ফ্যাট অনেক কম থাকার কারণে পেট ভরলেও ওজন বাড়ে না। যারা অতিরিক্ত মেদের কারণে বিব্রত তাদের আলু খাওয়া উচিত। 

অনিদ্রার সমাধান

পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম শরীরের ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে। শরীরকে পর্যাপ্ত আরাম দিতে আলু খাওয়া উচিত। আলুতে এসব উপাদান থাকার কারণে স্নায়বিক উত্তেজনা প্রশমিত হয় এবং নিশ্চিন্তে ঘুমানো যায়। যাদের অনিদ্রা বা কম ঘুমের সমস্যা রয়েছে তারা আলু খেতে পারেন। 

স্টাইলক্রেজ ডট কম অবলম্বনে

এইচএকে/এইচএন/এএ