ক্ষুধা পাওয়া আর ক্রেভিং এক জিনিস নয়। ক্ষুধা পেলো, কিছু একটা খাবার খেয়ে নিলেন, ঝামেলা শেষ। কিন্তু ক্রেভিং হচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু খাবার খাওয়ার প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা। সেই খাবার না খাওয়া পর্যন্ত মন শান্ত হয় না। মুশকিল হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খাবারটি হয় মুখরোচক ধরনের কিছু, অস্বাস্থ্যকর কিংবা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

ক্ষুধা পেলে খাবার খাবেন এটি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনোকিছু খাওয়ার ক্রেভিং হলেই সেটি খেয়ে নেওয়া আসলে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়। কারণ এতে আপনার ওজন তো বেড়ে যাবেই, সেইসঙ্গে আসবে আরও অনেক রোগও। এ কারণেই আপনাকে খাবারের প্রতি ক্রেভিং নিয়ন্ত্রণ করতে জানতে হবে এবং সেইসঙ্গে দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে এমন খাবার খেতে হবে।

বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক, প্রযোজক এবং সাবেক চিকিৎসক ডাঃ মাইকেল মোসলে এক প্রতিবেদনে খাবারের প্রতি ক্রেভিং থামানোর উপায় সম্পর্কে লিখেছেন। সেখানে তিনি একটি খাদ্য পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন। যেটি মেনে চলে অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমানো সম্ভব।

উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার

উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে তা অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আকর্ষণ এবং গভীর রাতে ক্ষুধা পাওয়ার অভ্যাস কমাতে পারে। ডাঃ মোসলে এমনটাই বলেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে তা আমাদের পেট দীর্ঘ সময় ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে এটি ক্ষুধার হরমোনকে কমিয়ে দেয়।’

সেইসঙ্গে এটি আমাদের শরীরে পেপটাইড নামক হরমোনের মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। যে কারণে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে। খাবারের তালিকায় পরিমিত প্রোটিন রাখলে তা পেট ভরিয়ে রাখার পাশাপাশি আপনাকে আরও বেশি কর্মক্ষম রাখবে। 

এটি ওজন কমাতে কীভাবে কাজ করে?

উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে তা হজমক্ষমতা বাড়াতে, ওজনের সঙ্গে সম্পর্কিত হরমোন নিয়ন্ত্রণ ও সার্বিক ওজন ব্যবস্থার উন্নতি করে। সেইসঙ্গে এ ধরনের খাবার খেলে তা সব সময় ওজন কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।  

ডাঃ মোসলে ২০১৪ সালের ইউএস ভিত্তিক এক গবেষণার কথা উল্লেখ করেছেন। যেখানে অংশগ্রহণকারীদের তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। সকালের খাবারে প্রোটিন খেলে কিংবা দিনের প্রথম খাবারটি দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে কি না তা দেখার জন্যই গবেষকরা এই গবেষণা করেছিলেন। 

এক ভাগ অংশগ্রহণকারীকে সকালের খাবারে ৩৫ গ্রাম প্রোটিন খেতে দেওয়া হয়েছিল, অন্য এক ভাগকে দেওয়া হয়েছিল ১৩ গ্রাম করে প্রোটিন। বাকি এক ভাগ অংশগ্রহণকারীকে সকালে কোনো খাবারই খেতে দেওয়া হয়নি। 

সেই সকালের পরে স্বেচ্ছাসেবকরা দুপুরের খাবারের আগে খাবারের প্রতি অংশগ্রহণকারীদের তীব্র আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে কি না সে বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। ফলাফল স্পষ্টই ছিল। উচ্চ প্রোটিন গ্রহণকারী দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডোপামিন লেভেল এবং খাবারের প্রতি ক্রেভিং সবচেয়ে কম ছিল।

উচ্চ প্রোটিনযুক্ত সকালের খাবার কী?

সকালের খাবারে উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার বলতে সাধারণত ডিম, চর্বিছাড়া প্রোটিন যেমন মাছ বা মুরগির মাংস, পরিজ ইত্যাদিকে বোঝায়। সকালের খাবারকে কার্যকরী করার জন্য এসব খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত ফাইবার যেমন কিছু ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাঃ মোসলে। 

তিনি বলেন, ‌‘দিনের শুরুতে অর্থাৎ সকালের খাবারে প্রোটিন খেলে তা আমাদের দীর্ঘ সময় শক্তি দেয় কারণ এর ফলে আমাদের মস্তিষ্কের ভেতরে টাইরোসিন নামক রাসায়নিকের মাত্রা বেড়ে যায়।’

উচ্চ প্রোটিনযুক্ত যেসব খাবার খেতে পারেন

মায়ো ক্লিনিকের মতে, স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের উৎস হলো সয়া, বাদাম,মটরশুটি, মসুর ডাল, চর্বিহীন মাংস, বিভিন্ন ধরণের মাছ বা সামুদ্রিক খাবার, ডিমের সাদা অংশ বা কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার।

অতিরিক্ত প্রোটিন খাবেন না

উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবারের বিভিন্ন উপকারিতা থাকলেও এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে তা ক্ষতিকর হতে পারে। কিছু উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার কার্ব গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারে। এটি এত বেশি হতে পারে যে এর ফলে পর্যাপ্ত ফাইবার বা পুষ্টি শরীরে না-ও পৌঁছাতে পারে। এটি নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, মাথা ব্যথা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে। সেইসঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু প্রোটিন যেমন লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত মাংস, উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত খাবার ইত্যাদি হার্টের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে