বাস, ট্রেন বা লঞ্চ ইত্যাদি যেকোনো যানবাহনে দীর্ঘসময় ভ্রমণ করলে অনেকেরই বিভিন্ন শারীরিক অস্বস্তি দেখা দেয়। যেমন- মাথা ঝিম ঝিম করা, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা করা, বমিবমি ভাব লাগা বা বমি হওয়া ইত্যাদি। অনেকসময় দেখা যায় যে এসব শারীরিক অস্বস্তির জন্য ভ্রমণের আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়। এমনকি অনেকে এই সমস্যার কারণে এসব যানবাহনে ভ্রমণ থেকে বিরতও থাকেন। যাত্রাপথের এই শারীরিক অস্বস্তি মোশন সিকনেস বা গতিজনিত অসুস্থতা নামে বহুল প্রচলিত।

মোশন সিকনেস কিন্তু আসলে কোনো রোগ নয়- এটি একটি বিশেষ অবস্থাজনিত শারীরিক সমন্বয়হীনতা। এটি শিশুর বেশি হলেও যে কারো ক্ষেত্রেই এমনটি হতে পারে। বিশেষ করে নারীর এ সমস্যা আরো বেশি হয়।মো শন সিকনেসের প্রধান কারণ সংবেদনজনিত অসামঞ্জস্য। গতিজনিত অবস্থায় ভেস্টিবুলার সিস্টেম ও দৃষ্টিজনিত সিস্টেম মস্তিষ্কে মিশ্র সংকেত পাঠালে গতি ও জড়তার অসঙ্গতিপূর্ণ অবস্থানের জন্য সমন্বয়হীনতা থেকে তৈরি হয় সংবেদী অসামঞ্জস্য। যানবাহনের প্রচণ্ড দুলুনি ছাড়াও যাত্রার পূর্বে বা যাত্রাকালে অস্বাস্থ্যকর ও গুরুপাক খাদ্যগ্রহণ, অতিরিক্ত ক্লান্তি, পাকস্থলির প্রদাহ বা অন্যান্য হজমজনিত সমস্যায় মোশন সিকনেস আরো তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। যাত্রাপথের বিড়ম্বনাময় এই মোশন সিকনেস প্রতিহত করতে প্রাথমিকভাবে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে-

* যাত্রাপথে বাস, নৌকা, গাড়ি বা উড়োজাহাজ ইত্যাদি যানবাহনের সামনের আসনের দিকে না তাকিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করুন। এতে গতিজনিত ভারসাম্য ও দৃষ্টির মাঝে সমন্বয়হীনতা বহুলাংশে কমে যাবে। এছাড়া একদম পিছনের সিটে বসা থেকে বিরত থাকবেন এবং যানবাহন যেদিকে যাবে, তার বিপরীত দিকে মুখ করে অর্থাৎ আপনার আসনে উল্টো হয়ে বসবেন না।

* যানবাহনের ভেতরে কোনো উৎকট গন্ধ থাকলে তা দূর করতে ভালো মান ও ঘ্রাণের এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করুন।

* ব্যক্তিগত গাড়িতে উঠলে সুযোগ বুঝে চলতি পথে কিছুক্ষণের যাত্রাবিরতি নিতে পারেন।

* যাত্রাকালে আসনে কুঁজো হয়ে বা উবু হয়ে বসে মোবাইল ফোন বা ট্যাবের স্ক্রিনে না তাকানোই উত্তম। যাত্রাপথে প্র‍য়োজনের বাইরে এগুলো ব্যবহার করার দরকার নেই। সিটে ঝুঁকে বই পড়া থেকেও বিরত থাকুন।

* ভ্রমণের সময় মন ভালো রাখার চেষ্টা করুন। গান শুনুন, সহযাত্রীর সাথে আড্ডা দিন অথবা ভ্রমণে আনন্দ করার কথা ভাবুন। মন প্রফুল্ল থাকলে সহজে শারীরিক অস্বস্তি হয় না।

* যাত্রা শুরুর আগে বা যাত্রা পথে বেশি ফ্লেভারযুক্ত খাবার, মশলাযুক্ত ঝাল খাবার, কোমল পানীয়, চিপস, কেক, সিগারেট, পান-সুপারি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। খেতে ইচ্ছা করছে না এমন খাবার গাড়িতে ওঠার আগে খাবেন না। ৪-৫ ঘণ্টার বেশি ভ্রমণকাল না হলে যাত্রাপথে খালি পেটে থাকা সবচেয়ে ভালো। তবে এর চেয়ে দীর্ঘ যাত্রাকাল হলে যাত্রা শুরুর আগে বা মাঝপথে হালকা সহজপাচ্য কিছু খাবার খাওয়া যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন পেট পুরে খাওয়া না হয়ে যায়। বেশি করে পানি পান করুন। পাশাপাশি লেবু, বড়ই, পেয়ারা বা অন্য টক খাবার খাওয়া যেতে পারে।

* অন্য যাত্রীকে বমি করতে দেখলে অনেকসময় নিজেরও বমি আসতে পারে। এজন্য কেউ বমি করলে সেদিকে না তাকিয়ে থেকে নিজে খানিকটা পানি বা টকজাতীয় খাবার খেয়ে নিন।

* ভ্রমণের সময় ব্যাগে আপেল, জলপাই, আদা কুচি, পুদিনাপাতা, বিটলবণ, কমলা, লেবু ইত্যাদি রাখতে পারেন। এগুলো মোশন সিকনেস কমাতে সাহায্য করে।

* আপনার আসনের পাশের জানালা খুলে রাখুন। সতেজ বাতাস চোখে-মুখে লাগলে বমিভাব কমে আসে।

* বমি নিরোধক কিছু ঔষধ পাওয়া যায়। যেমন- অ্যাভোমিন, জয়ট্রিপ ইত্যাদি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে যাত্রা শুরুর আগে এসব ঔষধ খেয়ে নিলে মোশন সিকনেস হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

এইচএন/এএ