বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা হলো, কেবল বয়স বাড়লেই জয়েন্ট পেইনের ঝুঁকি বাড়ে। তাই জীবনের একটা পর্যায়ে এই সমস্যায় ভুগতে হবে বলে তারা আগেভাগেই ধরে নেয়। কিন্তু একটু খেয়াল করলে দেখতে পাবেন, চারপাশে এমন অনেক বয়স্ক ব্যক্তি আছেন যারা মোটেও জয়েন্ট পেইনে ভুগছেন না। তাই বোঝাই যায় যে, জয়েন্ট পেইনের জন্য কেবল বয়সই দায়ী নয়। মূলত আমাদের কিছু লাইফস্টাইল অ্যাক্টিভিটি আছে যা হাড় দুর্বল করে এবং জয়েন্টের সমস্যা তৈরি করে। তবে আপনি চাইলে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ক্ষতিকর অভ্যাসগুলো এড়িয়ে চলার পাশাপাশি উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণের মাধ্যমে হাড়ের ক্ষয় ও জয়েন্ট পেইন রোধ করা সম্ভব। 

হাড়ের ক্ষয় কমাতে চাইলে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের বিকল্প নেই। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, প্রয়োজনে গ্রহণ করতে অর্গ্যানিক ফুড। এ ধরনের খাবার হাড়ের ক্ষয় রোধ করে জয়েন্ট ভালো রাখতে কাজ করে। পরিমিত ঘুম, নিয়মিত শরীরচর্চাও বজায় রাখতে হবে। সেইসঙ্গে বাদ দিতে হবে কিছু অভ্যাস।

ধূমপান

তামাক আমাদের শরীরের টিস্যুতে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল তৈরির জন্য দায়ী। ধূমপানের অভ্যাস কেবল ফুসফুসের জন্যই খারাপ নয়, এটি হাড়ের জন্যও ক্ষতিকর। তামাক সেবন করলে হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। ফ্রি র‌্যাডিকেল হাড় তৈরির কোষগুলোকে মেরে ফেলে। ধূমপানের অভ্যাস স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের উৎপাদন বাড়ায় এবং ক্যালসিটোনিন হরমোনের উৎপাদন হ্রাস করে। কর্টিসল আমাদের হাড়ের স্টক হ্রাস করে, অন্যদিকে ক্যালসিটোনিন এটি বজায় রাখে। আপনার যদি ইতিমধ্যেই হাড়ের ফ্র্যাকচার হয়ে থাকে তাহলে ধূমপান তা আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই অভ্যাস রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নিরাময় প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। ধূমপান করলে তা শরীরের অক্সিজেন এবং পুষ্টিকে নিরাময়ের জন্য ফ্র্যাকচারের জায়গায় স্থানান্তর করার ক্ষমতা সীমিত করে।

একটানা বসে থাকা

একটানা বসে থাকেন এমন মানুষের দ্রুত হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বেশি থাকে। পেশী সংকোচন হাড়কে শক্তিশালী করে তোলে। তাই হাড়ের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত হাঁটা, ওজন বহন করার মতো ব্যায়াম হাড়ের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। তাই এ ধরনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সেইসঙ্গে বাদ দিতে হবে একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকার অভ্যাসও।

অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করা

অ্যালকোহলও শরীরে কর্টিসলের উৎপাদন বাড়ায় যা হাড়ের ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। অ্যালকোহল আমাদের শরীরে টেস্টোস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেনের মাত্রাও কমিয়ে দেয়। এই হরমোনগুলো হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তাই অ্যালকোহল গ্রহণের অভ্যাস থাকলে তা বাদ দিতে হবে।

অতিরিক্ত লবণ খাওয়া

অনেকেরই খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার সঙ্গে আমাদের হাড়ের ঘনত্ব কমার সম্পর্ক রয়েছে। সোডিয়াম গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীর প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম নিঃসরণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি কোনো প্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারী প্রতিদিন মাত্র এক গ্রাম অতিরিক্ত সোডিয়াম খাওয়ার অভ্যাস করেন তবে প্রতি বছর তার হাড়ের ঘনত্বের ১ শতাংশ করে কমতে থাকে। তাই প্রতিদিন ২,৩০০ মিলিগ্রামের কম সোডিয়াম পাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে ১,৫০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়, এমনটাই পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

সারাদিন ঘরে থাকা

হাড়ের শক্তি বজায় রাখার জন্য ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি-এর অভাবে আমাদের হাড় পাতলা এবং ভঙ্গুর হতে শুরু করে। এই ভিটামিনের প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে একটি হলো সূর্যের আলো। আপনি যদি দিনের বেলা বাইরে পর্যাপ্ত সময় না থাকেন তবে আপনার এই পুষ্টির অভাব হতে পারে। প্রতিদিনের ভিটামিন ডি-এর জন্য বাইরে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না হলে খাবারের মাধ্যমে এর ঘাটতি কিছুটা কমানো সম্ভব হতে পারে। খাবারের তালিকায় স্যামন ফিশ, ডিমের কুসুম এবং ভিটামিন ডি-ফর্টিফাইড খাবারগুলো রাখতে পারেন। 

ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান না। উভয় পুষ্টির যথেষ্ট পরিমাণ গ্রহণ নিশ্চিত করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। তার পরামর্শে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি যুক্ত সম্পূরক গ্রহণ করতে পারেন। 

আমরা বেশিরভাগ সময়েই হাড়ের স্বাস্থ্যকে অবহেলা করি। যে কারণে বয়স বাড়লে ভুক্তভোগী হতে হয়। তাই হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অভ্যাস দূর করা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বেছে নেওয়ার এখনই সঠিক সময়।

টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে