ছবি: প্রতীকী

প্রথম স্পর্শ মা, প্রথম পাওয়া মা, প্রথম শব্দ মা, প্রথম দেখা মা, আমার জান্নাত তুমি, মা । মা একটি ছোট্ট শব্দ। এই শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সব মায়া, মমতা, অকৃত্রিম স্নেহ, আদর, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সব সুখের কথা। চাওয়া-পাওয়ার এই পৃথিবীতে বাবা-মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা চলে না। মায়ের তুলনা মা নিজেই। মায়ের মতো এমন মধুর শব্দ অভিধানে দ্বিতীয়টি আর নেই। নদীর তলদেশে তো যাওয়া যায় কিন্তু মায়ের ভালোবাসার গভীরতা পরিমাপ করা যায় না। মা যেন সীমার মাঝে অসীম।

মায়ের স্পর্শেই সন্তান ধীরে ধীরে পূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠে। পৃথিবীর সব ধর্মেই মায়ের মর্যাদাকে উচ্চাসীন করেছে। ৩৬৫ দিনের প্রতিটি সেকেন্ডেই মনে করতে চাই মা শব্দটিকে। মা, আম্মু, আম্মা, আম্মি, মাম্মি সন্তানেরা যে যেভাবে ডাকুক- এই শান্তির ডাক শতকিছুর বিনিময়েও অন্য কোনো শব্দের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। প্রথমদিন থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার কোনো পরিবর্তন হয় না। মা তাই আমাদের কাছে অতুলনীয়, তিনি অনন্য।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর সম্প্রসারণের ফলে আজকাল মানুষের মাঝে যে কত দিবসের জন্ম হয়েছে, তার হিসাব নেই। বাবা দিবস, মা দিবস, ভালোবাসা দিবস, বন্ধু দিবস ইত্যাদি। নাম না জানা আরও কত যে দিবস আছে! বাবা দিবসে বাবার ছবি দিয়ে অনলাইনে পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়- ‘বাবা, আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।’ অথচ সেই বাবাই হয়তো জানেন না যে তার সন্তান তাকে কতটুকু ভালোবাসে! কারণ ওই বাবার তো অনলাইন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। মা দিবসে লেখা হয়- ‘মা, তুমি আমার জীবন।’ অথচ মা দিবসে সেই বয়স্ক মা জীবনের তোয়াক্কা না করে কষ্ট করে হলেও রান্নাঘরে উনুনের সামনে রান্না করেন। কারণ তিনি রান্না না করলে বাড়ির সবাইকে উপোস থাকতে হবে। 

‘মা’ তোমার কথা মনে হলেই মনে পড়ে তোমার কষ্টের কথা। ছোট থেকে বড় হয়েছি, যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, দেখেছি কোনো না কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে আছো তুমি, মধ্যবিত্ত পরিবারের মাসকাবারি গোনা টাকায় সংসার চালানোর মতো চিরন্তন সব ঝামেলা। ছোটবেলায় তোমার এসব ঝামেলা মনে তেমন প্রভাব ফেলত না, অবুঝের মতো এটা সেটা আবদার করে ফেলতাম। অনেক ছোট ছিলাম মা, অনেক অবুঝ ছিলাম। তাই বিনা কারণেই অনেকভাবে কষ্ট দিয়েছি তোমাকে।

পড়াশোনা করতাম না, স্কুলে যেতে চাইতাম না, সারাদিন রোদে রোদে ঘুরতাম খেলাধুলা করতাম। আরও অনেককিছু করেছি, যেগুলো বলে শেষ করা যাবে না। বকা দিয়েছো আবার আদর করে বুকে টেনে নিয়েছো।

মা তোমাকে নিয়ে জীবনের একটি বাস্তবতা না বললেই নয়। পড়াশুনার সুবাদে আজ ১১ বছর ধরে তোমার থেকে দূরের হোস্টেলে থাকি। হোস্টেলের খাওয়া দাওয়া তিন পদে সীমাবদ্ধ। মুরগি, মাছ অথবা ডিম। প্রতিটিই ছোট্ট এক টুকরা করে। মা নিজেও জানে । তবু গত দশ বছর ধরে প্রতিবেলায় ফোন দিয়ে যে প্রশ্ন দুটি তিনি করবেনই সেগুলো হলো-‘খেয়েছিস? কি দিয়ে খেয়েছিস?’
জবাব শুনে মা প্রতিবেলায় কষ্ট পান। তবু তার শুনতেই হবে। আমিও পাল্টা প্রশ্ন করি। বাসায় ভালো কিছু রান্না হলে মা বলতে লজ্জা পান। যেন আমি বাসায় না থাকা অবস্থায় ভালো খাবার রান্না করাটা বিরাট অন্যায়। আবার অজুহাতও দেন! আজ মেহমান এসেছিল- তাই এটা করেছি। আজ দুপুরের রান্নাটা খেয়ে একেবারে রুচি চলে গেছে- তাই এটা করেছি। 

ছোটবোনের কাছে শুনেছি যেদিন আমার প্রিয় কোনো খাবার রান্না হয় সেদিন খেতে বসলে মায়ের নাকি মন খারাপ হয়ে যায়। এমনই কোনো একদিন আমার শুধু এক টুকরা মাছ দিতে ভাত খাওয়ার কথা শুনে মায়ের চোখে পানি এসে গিয়েছিল। এটাও বোনের কাছে শোনা। অবশ্য জিজ্ঞেস করলে মা স্বীকার করেন না। সত্যিই পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো মা হওয়া। এ কাজে কোনো সাপ্তাহিক ছুটি নেই, কোনো বেতন নেই, বোনাস নেই, পদোন্নতি নেই। তবু কীভাবে যে মায়েরা এই কাজ সারাজীবন করে যান বুঝি না! শুধু মায়ের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখে বুঝি- সবচেয়ে কঠিন এই কাজই হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম কাজ। সন্তান যত বড়ই হোক না কেন মায়ের প্রতি ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না। আর তাই তো মা তুমি বেঁচে থাকার দ্বিতীয় অক্সিজেন। অনেক অনেক ভালোবাসি তোমাকে মা।

অর্থনীতি বিভাগ, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ রংপুর।