ছবি: প্রতীকী

আম্মু,

তোমাকে না বলা কোনো কথা কি আছে আমার? শৈশব- কৈশোর পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পা দিলাম, নিজের কথাগুলোকে ডায়েরিতে আবদ্ধ করতে শিখে গেছি। কতো কথা, ব্যথারা সেখানে লুকিয়ে আছে, তোমাকে জানতে দিলে তুমি সহ্য করতে পারতে না।তোমাকেও তো কতবার বলতে ইচ্ছে হয়, এই টক্সিক সম্পর্কে আর থেকো না। নিজেকে ভালোবাসো।

তুমি ছাত্র-ছাত্রীদের প্রিয় ম্যাম। আমারও প্রথম শিক্ষক। আমার হাতের লেখা কিংবা গণিতের উস্তায তুমি। ক্যারিয়ার জীবনে কতো আত্মবিশ্বাসী তুমি। কিন্তু জীবনের আরেকটা অধ্যায়ে এতো দ্বিধা, আত্মবিশ্বাসহীন কেন মা তুমি? নিজের স্বপ্ন-ইচ্ছেদের কেমন করে ছেড়ে দাও?

আজকাল আর তুমি সাজো না কেন? কতো সুন্দর শাড়িগুলো ভাঁজ হয়ে পড়ে থাকে ওয়ারড্রোবে। পুরনো দিনের ছবির অ্যালবামে তোমার সেই হাসিমাখা ছবিগুলো চোখে ভাসে। সেই তেমন হাসি আর হাসো না তো! মা হওয়া কি তবে স্বপহীন হওয়া? এমন স্বপ্নহীন তোমাকে দেখতে আমার বুকটা চৌচির হয়ে যায়। একটা সময় কেমন গলা ছেড়ে তুমি গাইতে, ‌‘গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙামাটির পথ….।’ আমার বড্ডো ইচ্ছে হয় তোমার স্বপ্নগুলো বাঁচিয়ে তুলতে। মুষড়ে পড়া চারাগাছের মতো পানি দিয়ে, আলো দিয়ে আবারও সতেজ করে তুলতে।

নানুভাইয়ের কাছে শুনেছিলাম তুমি রেডিও শুনতে ভালোবাসতে। পরীক্ষার সময়ও কানের কাছে নিয়ে পরে থাকতে বলে, নানু একবার ভীষণ চটেছিলেন। এখনো কি প্রিয় গানগুলো শুনতে ইচ্ছা হয়? নাকি বড্ডো বিস্বাদ লাগে?

পাহাড় নাকি সমুদ্র! মা-মেয়েতে ইচ্ছে হয় সমুদ্রে বেড়াতে! কিংবা দূর পাহাড়ের সবুজ বনে হারিয়ে যেতে। যেখানে কোনো টক্সিক মানুষ, কটুকথা থাকবে না। অযাচিত সম্পর্কের চাপে হৃদয় দুমড়ে মুচড়ে যাবে না। পাহাড়ের গা ঘেষে তাবুর ধারে বসে সারারাত আকাশ দেখবো কিংবা সঞ্চয়িতা থেকে তোমার প্রিয় কোনো কবিতা শোনাবো! এমন কি সম্ভব হবে না কোনদিন মা? মৌসুমি ভৌমিকের সেই গানটার মতো জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়,

কেন শুধু ছুটে ছুটে চলা

একে একে কথা বলা

নিজের জন্য বাঁচা নিজেকে নিয়ে।

যদি ভালোবাসা নাই থাকে

শুধু একা একা লাগে

কোথায় শান্তি পাব কোথায় গিয়ে?

বলো কোথায় গিয়ে?

আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমি তোমার স্বপ্ন ফিরিয়ে দেবোই। আমার স্বপ্নদের যে তুমিই একদিন বুনে দিয়েছিলে!

সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।