প্রতীক্ষিত বৃষ্টির দেখা আজ পেলেও পেতে পারেন, কারণ আজ বর্ষার প্রথম দিন। সব ঋতুর মধ্যে এই বর্ষাই বেশিরভাগের কাছে বেশি প্রিয়। এর বড় কারণ হলো তীব্র গরমের পরে স্বস্তির দেখা। বর্ষার জল এসে ধুয়েমুছে নিয়ে যায় কতকিছু। এক পশলা বৃষ্টির পর আকাশ যেমন মেঘ কেটে গিয়ে ঝকঝকে হয়ে ওঠে, তেমনই স্বচ্ছ আর জীবন্ত লাগে চারপাশও। তাইতো বৃষ্টিকে ছুঁয়ে দেখতে আমাদের মন আর বাঁধ মানে না যেন। 

বর্ষা নিয়ে গান, গল্প, কবিতা কম লেখা হয়নি। আমাদের সাহিত্যকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছে এই ঋতু, এই ঋতুর সৌন্দর্য। বর্ষা মানেই যে শ্যামল এক মায়া। লিখে লিখেও যেন শেষ হয় না। সারাদিন অঝোরে ঝরে যাওয়া বৃষ্টির মতো একটানা ভালোলাগা, একটানা মন খারাপ যেন ঘিরে থাকে এই বর্ষাতেই। ভেজা দরজায় যেন কে এসে দাঁড়ায়, স্মৃতির চৌকাঠ পেরিয়ে যেন মনে করিয়ে দিতে আসে পুরনো সেই দিনের কথা!

বর্ষার সঙ্গে আমাদের শৈশব-কৈশরের অনেক ভালোলাগার স্মৃতি জমে থাকে। টিনের চালে রুমঝুম বৃষ্টির ছন্দ, বৃষ্টিতে ভিজে ছোটাছুটি, এরপর জ্বরে পড়ে মায়ের বকুনি। বৃষ্টির দিনে মায়ের হাতের খিচুড়ি, চাল ভাজা, বাদাম ভাজা- আহা সেই আনন্দ! শহুরে ব্যস্ততার ভিড়ে সেসব আনন্দ এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না যেন, তবু স্মৃতি এসে উঁকি দেয় জানালায়। শৈশবে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সব ছেড়েছুড়ে। কিন্তু ফিরে যাওয়া হয় না। ফিরে যাওয়া যায় না।

শহরে নদী নেই, নেই খাল-বিল। ইট-পাথরের এই শহরে কাঁচের জানালা ওপাশে বৃষ্টি দেখতে পাওয়াটাই তাই এখন সৌন্দর্য। এটুকু নিয়েই আনন্দে থাকতে হয় আমাদের। এখন বৃষ্টি দেখলে আমরা চুলায় খিচুড়ি চাপিয়ে দেই, যদি সুযোগ থাকে। বিলাসিতা বলতে এটুকুই। ফুলের বনে বনে ছুটে বেড়ানোর দিন আর নেই ঠিকই, তবু আমাদের মন তো উড়ে বেড়াতে চায় কল্পনায়।

বর্ষার সৌন্দর্য দেখতে গ্রামে ছুটে যাওয়ারও মেলে না সুযোগ। থই থই জলে ভরা চারপাশ দেখতে, সন্ধ্যা না হতেই ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ডাক শুনতে মন আপনার কাঁদতেই পারে। তবে মনকে বেঁধে রাখতে হবে, কারণ আপনি এখন ‌‌‘বড়’। এই বর্ষায়, এই শহরে যতটুকু শ্যামলতা খুঁজে পান, ততটুকুই আপনার প্রাপ্তি। খুব বেশি মন কাঁদলে চলে যেতে পারেন কাছের কোনো পার্কে। সেখানে একটু হলেও দেখা পাবেন সবুজে। খুব বেশি বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করলে একদিন নাহয় সব অসুখের ভয় ভুলে ভিজলেনই!