করোনায় আক্রান্ত হওয়াটা কোনো প্রত্যাশিত বিষয় নয়। বরং এটি বেশ উদ্বেগজনক। যাই হোক, যদি জানতে পারেন যে আপনি করোনায় আক্রান্ত তবে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ৮০% এরও বেশি ক্ষেত্রে এই রোগ হালকা বা মাঝারি প্রকৃতির, সব রোগীর হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। তবু সতর্ক থাকতে হবে। করোনায় আক্রান্ত হওয়া উদ্বেগজনক, তবে চিকিৎকরা বলছেন যে, সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলে অনেক ক্ষেত্রেই দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব।

করোনা পজেটিভ হলে কী করা উচিত?

করোনায় আক্রান্ত হলে উদ্বিগ্ন হবেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসময় মনের ওপর কোনোরকম চাপ দেয়া যাবে না। কারণ আমাদের মন ভালো থাকলেই শরীর দ্রুত ভালো হবে। তাই নিজের হোক বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্য, করোনায় আক্রান্ত হলে পরবর্তী পদক্ষেপের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। কিছু নিয়ম মেনে চললে এই অসুখকে কাবু করা সহজ হবে। 

চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া

করোনায় আক্রান্ত হলে প্রথমেই ফলোআপ পরামর্শের জন্য আপনার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কোন ওষুধগুলো খেতে হবে, খাবারে কী কী পরিবর্তন আনতে হবে তা জানার জন্য এবং প্রয়োজনীয় কোর্সগুলো মেনে চলার জন্য, একজন নিবন্ধিত মেডিকেল প্র্যাকটিশনারের সহায়তা নিন। যদি আপনি করোনা ছাড়াও অন্য কোনো অসুস্থতায় ভুগে থাকেন তবে চিকিৎসকের কাছে সেসবও জানান। তবে নিজে থেকে কোনো ওষুধ খাবেন না। 

আলাদা থাকুন

সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে আশেপাশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তির আলাদা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি বাড়িতে থাকেন তবে  কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মেনে চলতে হবে। শুধু আলাদা থাকলেই হবে না; বাথরুম, খাওয়ার পাত্রসহ ব্যবহার্য জিনিস পত্র আলাদা করে ফেলুন। এগুলো কোনোভাবেই অন্যদের ব্যবহার করতে দেবেন না। পরিবারের অন্য সদস্যদেরও করোনার পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারলে ভালো। একই ছাদের নিচে যারা বাস করছেন তাদের প্রত্যেককে ন্যূনতম এক সপ্তাহের জন্য আলাদা রাখা উচিত।

যোগাযোগ

করোনায় আক্রান্ত হলে খেয়াল করুন, লক্ষণগুলো দেখা দেয়ার কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে কারা আপনার সাথে যোগাযোগ করেছেন। তাদের সবাইকে আপনার আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে অবহিত করতে হবে। এটিরা তাদের নিজের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।

দেখাশোনা করার ব্যক্তি

আপনি যদি হালকা সংক্রমণের শিকার হন তবে বাড়িতে থাকলেও আপনার দেখাশোনার জন্য অন্য কারও সাহায্যের প্রয়োজন হবে। সেই পরিচর্যাকারীকে সুস্থ এবং নিরোগ হতে হবে। আপনি যদি বাড়িতে একা থাকেন তবে পরিচর্যাকারীর আরও বেশি প্রয়োজন। খাবার, মুদি, ওষুধ এবং জরুরি পরিস্থিতিতে আপনাকে সাহায্য করার জন্য একজন সমর্থ ব্যক্তির দরকার হবে। বাড়িতে পোষা প্রাণী থাকলে আপনার অনুপস্থিতিতে তাদের দেখাশোনার ব্যবস্থা করতে হবে।

আপনার কী ধরণের চিকিৎসার প্রয়োজন

সংক্রমণের লক্ষণ এবং তীব্রতার ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন রোগীর বিভিন্ন চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। রক্তের অক্সিজেনের স্তর পরীক্ষা করার জন্য একটি অক্সিমিটার থাকা জরুরি। আপনার যদি বিপি বা চিনির সমস্যা থাকে তবে বাড়তি সতর্ক হতে হবে। আপনি যদি বাড়িতে থাকেন তবুও চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন, পাশাপাশি যারা আপনার যত্ন নিচ্ছে তাদেরও সে সম্পর্কে অবহিত করুন।

উপসর্গগুলো খেয়াল করুন

লক্ষণ দেখা দেয়ার প্রথম দুই সপ্তাহ সেদিকে লক্ষ করা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, সংক্রমণের ৫-১০ দিনের মধ্যে লক্ষণ এবং সংক্রমণের তীব্রতা বেড়ে যায়। ৮ বা ৯তম দিন সাধারণত সেই সময়, যখন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়তে পারে। যদি এই সময়ের মধ্যে লক্ষণগুলো কমে না আসে তবে অতিরিক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।শ্বাস প্রশ্বাসের হার, অস্বস্তি, শ্বাসকষ্ট এমন কিছু লক্ষণ যা আপনার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। নতুন কোনো উপসর্গ দেখা দিলেও তা চিকিৎসককে জানান।

কখন কোয়ারেন্টাইন শেষ করতে পারবেন?

বিশেষজ্ঞরা এখনও পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনের সময় ১৪ দিন বলছেন। তবে আপনি করোনায় আক্রান্ত হলে চিকিৎসককে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করুন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্ত হওয়ার আগে ব্যবহার্য জিনিসপত্র এবং আশেপাশের অঞ্চল জীবাণুমুক্ত করতে হবে। 

লক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হলে আলাদা থাকুন

২-৩ দিনের মধ্যে জ্বর সেরে গেলে বুঝবেন আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে কিছু লক্ষণ দীর্ঘ সময় ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আপনার যদি কাশি, সর্দি-শ্বাসকষ্টের মতো শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাগুলো চলমান থাকে তবে আপনি আরও কিছুটা সময় আলাদা থাকুন। স্বাস্থ্যের উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলে কোয়ারেন্টাইন চালিয়ে যান।

এইচএন