শ্বাসকষ্ট করোনাভাইরাসের একটি গুরুতর উপসর্গ। এই ভাইরাস একবার শরীরে আক্রমণ শুরু করলে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং আশঙ্কাজনক পরিণতি। শ্বাসকষ্ট ও বুকের ব্যথা হলো শ্বাসনালির মাধ্যমে দ্রুত ভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার লক্ষণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে অক্সিজেন সাপোর্ট দরকার হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে ঘরে বসেই সমাধান সম্ভব। তবে শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়া অবশ্যই উদ্বেগজনক এবং অস্বস্তিকর।

শ্বাসকষ্ট হলে কেমন বোধ হয়?

শ্বাসকষ্টের ধরন সব রোগীর ক্ষেত্রে একরকম হয় না। এর তীব্রতা কারও ক্ষেত্রে বেশি আবার কারও ক্ষেত্রে কম হতে পারে। তবে বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে কয়েক সেকেন্ড পরপর শ্বাস নেওয়ার জন্য হাঁপাতে দেখা যায়। নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হওয়াটা করোনাভাইরাসের সবচেয়ে কষ্টকর অভিজ্ঞতা হতে পারে। কঠোর কোনো শারীরিক পরিশ্রম করলে শ্বাসকষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তা উদ্বেগজনক। সেজন্য দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।

করোনাভাইরাস শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা সৃষ্টি করে কেন?

ভাইরাস কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে সংক্রামিত হয় তার ওপর নির্ভর করে প্রকাশ হয় এর লক্ষণ। ফুসফুসের ক্রিয়াকলাপে প্রদাহ এবং ব্যাঘাত ঘটলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।

করোনাভাইরাস ফুসফুসের টিস্যু এবং লাইনিংগুলোতে আক্রমণ করার সাথে সাথে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বায়ু প্যাসেজগুলোকে ব্যাহত করে। এতে ভাইরাল আক্রমণের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে শরীরের কোষগুলোতে প্রদাহ ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট।

শ্বাসকষ্ট হলে তা ফুসফুসে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি ও তরল পরিবহনে বাধা দেয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, নিঃশ্বাসে বিষক্রিয়া বাড়িয়ে তোলে যা অতিরিক্ত জটিলতা ডেকে আনতে পারে। অক্সিজেন প্রবাহের সংকট হলে তা স্যাচুরেশন ঘটায় এবং রক্ত ​​প্রবাহকে প্রভাবিত করে। এসব কারণে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় এবং অন্যান্য লক্ষণগুলোও বাড়িয়ে তোলে।

কারা বেশি ঝুঁকিতে?

উচ্চ বিএমআই স্তর এবং স্থূলত্ব বুক এবং ফুসফুসে অতিরিক্ত ওজনের কারণ পারে। ফলে নিঃশ্বাস নিতে সাহায্যকারী পেশীগুলোতে চাপ পড়ে। দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসজনিত ব্যাধি বা ফুসফুস সংক্রমণে ভুগছেন এমন ব্যক্তিও দ্বিগুণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। কিছু শ্বাসনালির সংক্রমণ যেমন- নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা নিঃশ্বাস গ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করে এবং শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।

এই লক্ষণ কত দ্রুত দেখা দিতে পারে?

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ৫-১৪ দিনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেওয়ার ৬ দিন পরে শ্বাসকষ্টের লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়।

যেসব লক্ষণ ভয়ের কারণ

যেহেতু শ্বাসকষ্টের সমস্যা সব রোগীর ক্ষেত্রে একভাবে ঘটে না তাই আতংকিত না হয়ে এর গুরুতর অবস্থা সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে। মনে রাখবেন, করোনাভাইরাসের কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতা সব সময় মারাত্মক না-ও হতে পারে। যাই হোক, কখন চিকিৎসা নেওয়া জরুরি তা জেনে রাখা ভালো। যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয় তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিতে হবে-

* শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে ব্যথা অনুভব করা।
* অবিরাম চাপ অনুভব করা, শ্বাসের সময় কাশি।
* ঠোঁট বা পুরো মুখে নীল, বেগুনি বা ফ্যাকাশে আভা দেখা দেওয়া।
* অক্সিজেন স্যাচুরেশন।
* নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা।
* জেগে থাকতে থাকতে অসুবিধা।
* প্রতি ২ সেকেন্ডে জন্য শ্বাসের জন্য হাঁপানো।

থেরাপি এবং প্রতিকার

করোনাভাইরাস কিংবা অন্য কোনো কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অক্সিজেন সহায়তা দেওয়া হয় এবং নিবিড় থেরাপির ব্যবহার প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিত্সা সহায়তা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি কিছু প্রতিকার মেনে চললে তা রোগীকে আরও ভালো শ্বাস নিতে এবং সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। এটি হালকা ধরনের করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী। শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা গভীর শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া, গরম পানির ভাপ ইত্যাদি কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে এইচএন/এএ