সাধারণত অভিভাবকরা মনে করেন যে শিশুরা সব ধরনের খাবার নাও খেতে পারে। প্রি-প্যাকেজড কিড-সাইজ স্ন্যাকস যেমন চিকেন নাগেটস, স্যান্ডউইচ শিশুদের পছন্দের খাবার। কিন্তু মায়েরা সচরাচর এমন খাবার শিশুদের খেতে দিতে চান না যদি শিশুটি জোর না করে। শিশুর জন্য অভিভাবকরা যে ধরণের খাবার তৈরি এবং পরিবেশন করে সেটি পরিবর্তন করা দরকার। কিন্তু বাবা-মা চাইলেই তাদের দুশ্চিন্তা দূর করতে পারে যদি তারা কিছু নিয়ম মেনে চলে। আসুন জেনে নিই সেই নিয়মগুলো-

১. খাবারকে না বলা চলবে না

বাসায় শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের কোনো খাবার নিয়ে অভিযোগ করার সুযোগ রাখবেন না। এর মানে তাদের সব খাবারই খেতে হবে তেমনও নয়। কিন্তু খাবারকে না বলা চলবে না। সব খাবার শরীরে পুষ্টি জোগায়। শিশুদেরকে এটি বোঝানো উচিত। প্রত্যেক খাবারেরই নিজস্ব গুণ আছে। যারা অনেক কষ্ট করে রান্না করে শিশুরা খাবার না খেলে তারাও মনে কষ্ট পায়। ক্ষুধার্ত না থাকলে কাউকে খাবারের জন্য জোর করা উচিত নয়। খাবারের টেবিলে অবশ্যই খুশি মনে বসতে হবে। তাতে খাদ্য পরিপাক ভালোভাবে হয় এবং ভালো ঘুমও হয়। যেকোনো খাবার নিয়ে বলা উচিত না যে এটা ভালো না। এতে শিশু পরবর্তীতে ওই খাবার আর খেতে চায় না।

২. খাবার খাওয়াকে স্বাভাবিক অভ্যাস হিসেবে গড়ে তুলুন

শিশুরা খাবার খায় শরীরে পুষ্টি জোগাতে। তাই অভিভাবকের উচিত সঠিক নিয়মে খাবার দেওয়া। খাবার শেষ করতে পারলে পুরস্কার পাবে- শিশুকে কখনো এ ধরনের কথা বলবেন না। তাহলে ওরা ধরে নেবে যে খাবার খাওয়া একটি কষ্টের কাজ যা শেষ করতে পারলে পুরস্কার পাওয়া যায়। বরং খাবার খাওয়াকে প্রতিদিনের সাধারণ অভ্যাস হিসেবেই গড়ে তুলুন। এমনকী শিশুর জন্মদিনেও অনেক পদের আয়োজন করার প্রয়োজন নেই। এর বদলে তাকে এই বিশেষ দিন উপলক্ষে পছন্দের কিছু কিনে দিন, ঘুরতে নিয়ে যান। আবার শাস্তি হিসাবে কখনোই শিশুর খাবার বন্ধ করা ঠিক না। এতে শিশু মনে কষ্ট পাবে এবং দুর্বল হয়েও পরবে। তবে অস্বাস্থ্যকর খাবারও দেয়া চলবে না। তাদেরকে বুঝাতে হবে কোনটি তাদের জন্য ঠিক। শিশুদেরকে খুশি রাখতে মাঝে-মধ্যে তাদের জন্য ভালো খাবার রান্না করা উচিত । এতে তাদের মনও ভালো থাকবে এবং তারা খুশিও হবে। মূলত যখন তারা কোনো ভালো কিছু করবে তখন তাদের উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে এটি করতে পারেন। কিন্তু কোন খারাপ কাজ করলে শাস্তি না দিয়ে অবশ্যই বোঝাতে হবে।

৩. শিশুর ক্ষুধা নষ্ট হতে দেবেন না

অনেকেরই খাওয়ার সময় চলাফেরা করার অভ্যাস রয়েছে যার ফলে ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে শিশুরা নানা অজুহাতে এই কাজটি করে থাকে। কিন্তু তাতে আরও ক্ষতি হয়ে যায়। তাই এই কাজ তাদের করতে দেয়া যাবে না। সঠিক সময়ে খাবার দিলে শিশুরা যেকোনো খাবারই খুশি হয়ে খেয়ে নেয়। এতে তাদের খালি পেটেও বেশিক্ষণ থাকতে হয় না। পরবর্তী খাবারের জন্যও তারা উৎসাহিত থাকে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার জন্য ক্ষুধাকে অজুহাত হতে দেয়া যাবে না। শিশুর ক্ষুধা নিবারণে হালকা নাস্তা খাওয়ার অভ্যাস হতে দেয়া যাবে না।

৪. পারিবারিক কার্যকলাপের একটি অংশ

টিভি দেখার সময় শিশুকে খাওয়ানোর অভ্যাস করা উচিত নয়। তাতে সে পরিবারের সঙ্গে খাবার খাওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়। শিশুরা পরিবারের সবার সঙ্গে খাবার খেলে তাদের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠবে। সবার সঙ্গে খাবার খেলে শিশুরা গল্প করতে পারবে এবং পরিবারের সবার প্রতি টানও কাজ করবে। সবার জন্যে অবশ্যই একই রকমের খাবারের ব্যবস্থা করা উচিত, তাতে সবাই মিলেমিশে খাওয়াদাওয়া করা শিখবে। খাবারের সময়টি পারিবারিক কাজের অন্তর্ভুক্ত। তাই এই সময় বাকি যেকোনো কাজ থেকে দূরে থাকা উচিত।

৫. চেষ্টা করুন, আবার চেষ্টা করুন

যেসব শিশু খাবার বেছে খায় তদেরকে সুন্দর করে খাবারে পরিবেশন করতে হবে। যাতে খাবারগুলো তাদের কাছে সুস্বাদু লাগে এবং খুশি হয়ে খায়। বাচ্চারা যখন কোন খাবার পছন্দ না করে তখন তারা ভিন্ন খাবারের বায়না ধরে, তখন অভিবাবকরা শুধু বোঝায় যে খাবারগুলো স্বাস্থ্যসম্মত। শিশু কোনো খাবার খেতে না চাইলে তাকে জোর করা উচিত নয়। বরং বোঝাতে হবে যে এটি তাদের জন্য উপকারী।