লকডাউনের কারণে বাসায় থাকতে হচ্ছে অনেককেই। এই অযাচিত অবসর কাজে লাগাতে গিয়ে তারা দিন-রাত শুয়ে বসে থাকছেন। যখন তখন ঘুম, বিছানায় গড়াগড়ি, সোফায় শুয়ে টিভি দেখা এসবে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন। আপনিও যদি সেই তালিকাভূক্ত হয়ে থাকেন তবে সতর্ক হোন। কারণ গবেষণা বলছে, শারীরিক কার্যকলাপ কমিয়ে যারা অলসতা করছেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তাদের ক্ষেত্রে বেশি।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের গবেষণা থেকে জানা গেছে, করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর দুই বছর আগে থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যারা অলস জীবন যাপন করে এসেছেন, তাদের মধ্য থেকেই করোনাভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। অলসতা পছন্দ ছিল যাদের, করোনায় আক্রান্ত হয়ে তাদের বেশিরভাগের দিন কাটছে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট। যারা নিয়মিত শরীরচর্চা ও শারীরিক কার্যকলাপ চালিয়ে গেছেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার হার তাদের কম। 

ব্রিটিশ জার্নাল অফ স্পোর্টস মেডিসিনে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় গবেষকরা বলেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে অলস জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা তাদের ক্ষেত্রে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের চিহ্নিত অন্যান্য ঝুঁকির ক্ষেত্রগুলোর তুলনায় এটি বেশি গুরুতর। তবে বয়স্ক ও বড় ধরনের অপারেশনের ইতিহাস থাকলে ভিন্ন বিষয়। ডায়াবেটিস, স্থুলতা, ধূমপান, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, হাইপারটেনশন, ক্যান্সারের মতো রোগগুলোর থেকেও অলসতার বিষয়টি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। 

গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪৮,৪৪০ জন করোনায় আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর ওপর গবেষণা চালিয়ে এর সম্ভাব্য ঝুঁকির দিকগুলো খুঁজে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়ের মধ্যে ছিল হাসপাতালে ভর্তির হার, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে থাকা ও মৃত্যুর হার।

গবেষণায় অন্তর্ভূক্ত রোগীদের গড় বয়স ৪৭। যাদের মধ্যে শতকরা ৬৭ ভাগ হলেন নারী। বিএমআই অনুযায়ী তাদের ওজন প্রায় ৬৮ কেজি। যা কি না স্থুলতা বা মেদবহুল হিসেবে পরিচিত। অর্ধেকের মতো রোগীর ক্ষেত্রে ছিল না ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, কিডনি বা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের সমস্যা। প্রতি ১৮ শতাংশ আক্রান্তের ভেতরে এ জাতীয় সমস্যা দেখা গেছে। ৩২ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে দুটি বা তিনটি রোগ দেখা গেছে। 

গবেষণায় নজর দেওয়া হয়েছে বয়স, জেন্ডার, শারীরিক অবস্থার ইতিহাসের মতো বিষয়গুলোর প্রতি। যেখানে দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘণ্টা শারীরিক নানা কসরত বা কার্যকলাপে লিপ্ত তাদের তুলনায় অলস ব্যক্তিরা করোনায় প্রায় দ্বিগুণ হারে আক্রান্ত হচ্ছেন। সেসব রোগীর ৭৩ শতাংশ ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হয় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের। এসব রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি অন্তত আড়াই গুণ বেশি। 

অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাইসার পার্মানেন্টে মেডিক্যাল সেন্টারের গবেষকরা জানিয়েছেন, এটি পর্যবেক্ষণমূলক পরীক্ষা এবং এখনই সিদ্ধান্ত দেওয়ার সময় আসেনি। রোগীদের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই প্রকাশ করা হয় এই পর্যবেক্ষণের ফলাফল। গবেষকরা বলেন, জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেব, করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য জনসাধারণকে শারীরিক কার্যকলাপ, টিকা গ্রহণ, মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ইত্যাদির প্রতি সচেতন করতে। 

এইচএন/এএ