দেশীয় নানা ফলের সমারোহ বাজারজুড়ে। আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, আনারস, লটকন, বেলসহ আরও কত ফল! স্বাদ, গন্ধ আর রঙের কারণে এসব ফল পছন্দ সবার কাছেই। সবচেয়ে বেশি পছন্দের ফলের নাম যদি জানতে চাওয়া হয় তবে বেশিরভাগের উত্তর হবে- আম। রসালো ও মিষ্টি এই ফল পছন্দ করে না, এমন মানুষ খুব কম। এটি পুষ্টিগুণেও অনন্য। যেহেতু মিষ্টি স্বাদের, তাই অনেকের মনে এই প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে, ডায়াবেটিস রোগীরা আম খেতে পারবে কি না? এর উত্তর হলো, অবশ্যই খেতে পারবে। তবে তাদের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে পরিমাণের দিকে।

যেসব ফল লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের অন্তর্ভুক্ত সেসব ফল খেতে বলা হয় ডায়াবেটিসের রোগীদের। এই তালিকায় রয়েছে আমও। আমে আছে গ্লুকোজ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফ্রুক্টোজ ও খাদ্য আঁশ। খাদ্য আঁশ ও এন্টিওক্সিডেন্ট রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, পাশাপাশি ব্লাড গ্লুকোজকে বাড়তে দেয় না। আমে থাকা ভিটামিন এ এবং সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণও প্রতিরোধ করে। আমে আছে ভিটামিন কে, ই এবং বি, ফোলেট। এসব উপাদান রোগ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।

আমে আছে প্রচুর পটাশিয়াম। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, ভালো রাখে হার্ট। এতে আছে প্রয়োজনীয় এনজাইম, পানি, খাদ্য আঁশ ও অন্যান্য উপাদান। এগুলো খাবার পরিপাকের জন্য দরকারি। পাশাপাশি উপকার করে পরিপাকতন্ত্রের। আম চোখের জন্য উপকারী। আমে থাকা সুগারে পাওয়া যায় ৮০-৯০% ক্যালরি। তাই বলে আম যে খাওয়া যাবে না তা কিন্তু নয়। ডায়াবেটিস রোগী তার খাবারের তালিকায় আম রাখতে পারেন, তবে কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে আম খাওয়ার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে এর পরিমাণের প্রতি। আমের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে ব্লাড গ্লুকোজ। এক্ষেত্রে আধা কাপ আম খাওয়া যেতে পারে ছোট ছোট টুকরা করে। প্রতিদিন যতটুকু শর্করা গ্রহণ করা যাবে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খেতে হবে। পাশাপাশি পর্যবেক্ষণ করতে হবে ব্লাড গ্লুকোজ। প্রতি আধা কাপ আমে পাওয়া যাবে ১০-১৩ গ্রামের মতো শর্করা। তাই একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প খাওয়া ভালো। 

ডায়াবেটিস রোগীদের আরেকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো, সময় মেনে খাবার খাওয়া। দিনের বেলা আম খেলে তাতে থাকা ক্যালরি নানা কাজে ব্যায় হয়ে যায়। কিন্তু সন্ধ্যা বা রাতে আম খেলে সেই ক্যালরি সেভাবে খরচ হয় না। তাই দিনের বেলা বিশেষ করে সকালে বা দুপুরের আগে আম খাওয়া যেতে পারে।

আমের তৈরি স্মুদি বা জুস খেতে যতই ভালো লাগুক, এর বদলে আম কেটে খাওয়ার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ স্মুদি কিংবা জুস তৈরি করে খেলে তাতে ঘাটতি থাকে খাদ্য আঁশের। এদি কাটা আম থেকে ডায়বেটিসের রোগীর জন্য উপকারী খাদ্য আঁশ পাওয়া যায়। আম দিয়ে ফ্রুটস সালাদ তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে। 

আপনি যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকেন তবে আমের সঙ্গে সামান্য প্রোটিন জাতীয় খাবার মিশিয়ে খেতে পারেন। হতে পারে তা বাদাম, সেদ্ধ ডিম বা লো ফ্যাট দুধ। এভাবে খেলে তা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। খেয়াল রাখবেন, আমের সঙ্গে বাড়তি চিনি যেন যোগ করা না হয়। 

সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ খাবার খেলে এবং শর্করার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আম খেলে তা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী, এমনটাই বলছেন গবেষকরা। শরীরে গ্লুকোজ বেড়ে গেলে পানির পরিমাণ কমে যায়। তাই প্রয়োজনীয় পানি পান করুন। আমের মতো সুস্বাদু ফল না খেয়ে থাকার প্রয়োজন নেই, কেবল সতর্ক থাকলেই হবে। 

এইচএন/এএ