চল্লিশ বছর বয়স পার হওয়া মানেই জীবনের এক নতুন সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়ানো। চিকিৎসকদের মতে, ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রমের লক্ষণগুলো বার্ধক্যে প্রকাশ পেলেও এর প্রক্রিয়া শুরু হয় মধ্যবয়স থেকেই। তাই চল্লিশের পর থেকে জীবনযাত্রায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনলে মস্তিষ্কের ক্ষয় রোধ করা এবং স্মৃতিশক্তিকে দীর্ঘকাল সতেজ রাখা সম্ভব।

মস্তিষ্ককে কর্মক্ষম রাখতে এবং ডিমেনশিয়া দূরে সরিয়ে রাখতে যে ১০টি অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি, তা নিচে আলোচনা করা হলো—

১. নিয়মিত শরীরচর্চা হাঁটা, দৌড়ানো বা সাঁতার কাটার মতো অ্যারোবিক ব্যায়াম মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এটি মস্তিষ্কের স্মৃতির অংশকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করা স্নায়ুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস খাবারের তালিকায় আমূল পরিবর্তন আনুন। প্রচুর সবুজ শাকসবজি, বেরি জাতীয় ফল, বাদাম, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ সামুদ্রিক মাছ এবং অলিভ অয়েল যুক্ত করুন। অতিরিক্ত চিনি, লবণ এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করে।

৩. নতুন কিছু শেখার চেষ্টা মস্তিষ্ককে সবসময় চ্যালেঞ্জের মুখে রাখুন। নতুন কোনো ভাষা শেখা, বাদ্যযন্ত্র বাজানো বা সৃজনশীল কোনো শখ (যেমন—ছবি আঁকা) মস্তিষ্কের নিউরনের সংযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। একে বলা হয় ‘কগনিটিভ রিজার্ভ’ তৈরি করা।

৪. পর্যাপ্ত ও গভীর ঘুম স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম মস্তিষ্ক থেকে বিষাক্ত প্রোটিন পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, যা ডিমেনশিয়ার অন্যতম কারণ।

৫. সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখা একাকীত্ব মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, আড্ডা দেওয়া বা সামাজিক কাজে যুক্ত থাকা বিষণ্ণতা কমায় এবং মস্তিষ্ককে সচল রাখে।

৬. রক্তচাপ ও শর্করার নিয়ন্ত্রণ উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস মস্তিষ্কের ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলোর ক্ষতি করে। তাই চল্লিশের পর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন এবং রক্তচাপ ও সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

৭. শ্রবণশক্তির যত্ন নেওয়া গবেষণায় দেখা গেছে, শ্রবণশক্তি কমে গেলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও দ্রুত হ্রাস পায়। তাই কানে শুনতে সমস্যা হলে অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনে হিয়ারিং এইড ব্যবহার করুন।

৮. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমানো দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ মস্তিষ্কের কোষ ধ্বংস করে। নিয়মিত ধ্যান, যোগব্যায়াম বা নিঃশ্বাসের ব্যায়ামের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।

৯. ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন ধূমপান মস্তিষ্কের ধমনীকে সংকুচিত করে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ায়। এছাড়া অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন স্নায়ুতন্ত্রের অপূরণীয় ক্ষতি করে। সুস্থ থাকতে এই অভ্যাসগুলো ত্যাগ করা জরুরি।

১০. মস্তিষ্কের ধাঁধা ও খেলা সুডোকু, দাবা বা শব্দজট সমাধান করার অভ্যাস করুন। এটি মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনাকে তীক্ষ্ণ রাখে এবং কার্যনির্বাহী ক্ষমতা বাড়ায়।

ডিমেনশিয়া কোনো অনিবার্য পরিণতি নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে এটি আমাদের অনিয়মিত জীবনযাত্রার ফল। চল্লিশ বছর বয়স থেকেই যদি আমরা সচেতন হই, তবে বার্ধক্যেও একটি স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল স্মৃতিশক্তি বজায় রাখা সম্ভব। মনে রাখবেন, আজকের ছোট ছোট স্বাস্থ্যকর অভ্যাসই কালকের সুস্থ মস্তিষ্কের চাবিকাঠি।

এমএন