বর্তমানে ঝটপট তৈরি করা যায় বা আগে থেকেই তৈরি করা খাবারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে অনেক। এর বড় কারণ হলো, নাগরিক ব্যস্ততায় অনেকেরই সময় থাকে না যত্ন করে খাবার তৈরি করে পরিবেশন করার। খাবার তৈরিতে ব্যয় হওয়া অতিরিক্ত সময় বাঁচিয়ে দিয়েছে প্রসেসড ফুড। এখন হাত বাড়ালেই নানা রেডিমেড ও মুখরোচক খাবারের পাওয়া যায়। যার বেশিরভাগই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। 

প্রসেসড ফুড কাকে বলে?

বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তৈরি করা খাবারকে প্রসেসড ফুড বলে। এমন অনেক খাবার আছে যেগুলো আমরা রান্না না করে খেতে পারি না। রান্নার পর সেগুলোও কিন্তু প্রসেসড ফুড হিসেবে ধরা হয়। এর অর্থ হলো সব ধরনের প্রসেসড ফুড ক্ষতিকর নয়। যেমন ধরুন ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করতে দুধকে পাস্তুরাইজ করা হয়। সেই দুধ কিন্তু ক্ষতিকর নয়। বিভিন্ন ধরনের চিজ প্রসেসড ফুড হলেও এটি উপকারী খাবার। তাই আমাদের জেনে নিতে হবে কোন ধরনের প্রসেসড ফুড ক্ষতিকর।

ক্ষতিকর প্রসেসড ফুড

যেসব খাবার উচ্চ মাত্রায় প্রক্রিয়া করা হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলো পুষ্টিগুণ অটুট থাকে না। সেইসঙ্গে মেশানো হয় অতিরিক্ত চিনি আর লবণ। প্রতিদিন যতটুকু লবণ বা চিনি খাওয়া যায় তার চেয়ে বেশি খেয়ে ফেললে তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে শরীরে। 

সাধারণত রেডিমেড ফ্রোজেন ফুড, চিপস, পাউরুটি ও যেসব খাবার মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গরম করা হয় যেমন পিজ্জা, বার্গার-  এধরনের খাবারগুলো খুবই হাই প্রসেসড ও হাই ক্যালরি খাবার। এ জাতীয় খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে তাই সতর্ক থাকতে হবে। 

প্রসেসড মিট বা সসেজ খেতে পছন্দ করেন অনেকেই। পিজ্জা, নুডলস, হটডগ ইত্যাদি মুখরোচক খাবারে সসেজ ব্যবহার করা হয়। এটি খেতে অনেক সুস্বাদু, সন্দেহ নেই। কিন্তু এর উপকারিতা নেই বললেই চলে। উল্টো শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টরল বাড়ানোর পাশাপাশি কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

ইন্সট্যান্ট নুডলস ও প্যাকেটজাত স্যুপগুলোতে বিভিন্ন প্রিজারভেটিভস থাকে বলে এগুলোও হাই প্রসেসড খাবারের তালিকায় রয়েছে।  হাই প্রসেসড খাবার ক্ষুধার হরমোনের উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। হাই প্রসেসড খাবারে ট্যান্সফ্যাট থাকে সবচেয়ে বেশি। এই ফ্যাটকে ফ্যাটি এসিডের সবচেয়ে খারাপ রূপ মনে করা হয়। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় অনেকটাই। জেনে নিন প্রসেসড ফুড আরও যেসব ক্ষতি ডেকে আনতে পারে-

স্থুলতার ঝুঁকি বাড়ায়

যেসব খাবারে অত্যধিক মাত্রায় চিনি থাকে সেগুলো হতে পারে স্থুলতার কারণ। গ্লুকোজ, সুক্রোজ, ম্যালটোজ, কর্ন সিরাপ, ফ্রুকটোজ ইত্যাদি খাবারকে বলা হয় এম্পটি ক্যালোরি। এতে কোনো ধরনের পুষ্টিগুণ নেই। তবে খেলে ওজন বাড়বে দ্রুত। দেখা দেবে স্থুলতার মতো সমস্যা।

বিপাক ক্রিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করে

বিপাক ক্রিয়া সঠিকভাবে না হলে শরীরের কোনো কাজই ঠিকভাবে করা সম্ভব হয় না। প্রত্যেকের বিপাক হার আলাদা হয়। কারও বিপাক ক্রিয়া হয় ধীরে হয়। তাই তাদের ক্যালোরি খরচ ধীরে হয় এবং বাকি ক্যালোরি শরীর সংরক্ষণ করে। আবার কারও বিপাক ক্রিয়ার গতি বেশি থাকে। যে কারণে তারা অনেক বেশি খাবার খেতে পারে এবং ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকিও কম থাকে। প্রসেসড ফুড খেলে তা শরীরের বিপাক ক্রিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করে।

ক্যান্সারের কারণ হতে পারে

ক্ষুধা পেলে হুটহাট ক্ষতিকর প্রসেসড ফুড খেয়ে নেন, কিন্তু এটি আপনার অগোচরেই ডেকে আনতে পারে ক্যান্সার। বেকন, সসেজ, হটডগ প্রভৃতি প্রসেসড ফুড ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। এটি হতে পারে কোলন ক্যান্সারের কারণ। পাশাপাশি হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।

পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে

প্রসেসড ফুডে থাকে অত্যধিক ট্রান্সফ্যাট, ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড ও প্রসেসড ভেজিটেবল অয়েল। এছাড়াও থাকে বিভিন্ন ধরনের প্রিসারভেটিভ। এসব হতে পারে পেটের সমস্যার কারণ।

অবসাদের কারণ

যারা বেশি বেশি প্রসেসড ফুড খান, তাদের ভেতরে অস্থিরতা বা অস্বস্তি বেশি দেখা যায়। নিয়মিত ক্ষতিকর প্রসেসড ফুডগুলো খেতে থাকলে তা অধিক উদ্বেগ ও অবসাদের কারণ হতে পারে। 

এইচএন/এএ