সুস্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য প্রতিদিন শাকসবজি খাওয়া অপরিহার্য। প্রতিদিন তিন ধরনের শাকসবজি রোগমুক্ত দীর্ঘ জীবন উপভোগের চাবিকাঠি। সব ধরণের এবং রঙের সবজি পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এগুলোর প্রত্যেকটিতে খনিজ পদার্থ রয়েছে যা আমাদের দেহকে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ কার্য সম্পাদন করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। 

খাবারের তালিকায় শাকসবজি যোগ করার সবচেয়ে ভালো দিক হলো এগুলো উচ্চ ফাইবার এবং অত্যন্ত কম ক্যালোরিযুক্ত। তার মানে আপনি ওজন বাড়ার চিন্তা না করে যত খুশি খেতে পারবেন। কিন্তু সব ধরনের সবজিতে একই পরিমাণ পুষ্টি থাকে না। কিছু বেশি পুষ্টিকর এবং সেগুলো আপনার প্লেটে যোগ করলে আপনাকে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করবে। জেনে নিন এমন ছয়টি সবজি সম্পর্কে-

পালং শাক

স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় পাতাযুক্ত সবুজ পালং শাক শুরুর দিকেই থাকবে। এটি প্রোটিন, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফোলেট এবং ক্যালসিয়ামের মতো প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সুপারফুড। পালংশাক ভিটামিন এ এর একটি চমৎকার উৎস, যা ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এবং দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। মাত্র ৩০ গ্রাম কাঁচা পালং শাক আপনার দৈনন্দিন ভিটামিন এ এর প্রয়োজনীয়তার ৫৬ শতাংশ সরবরাহ করে। নিয়মিত পালং শাক খেলে ক্যান্সার, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, হাঁপানি, নিম্ন রক্তচাপ এবং হজমের সমস্যা দূরে থাকে।

গাজর

বিটা ক্যারোটিনের উপস্থিতির কারণে গাজরের রং উজ্জ্বল কমলা। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, গাজর খেলে তা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫ শতাংশ কমাতে পারে। এছাড়াও এটি রক্তচাপ কমাতে, চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। ভিটামিন এ, সি, কে এবং পটাসিয়ামের উপকারিতা সমৃদ্ধ গাজর বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যেতে পারে। গাজরের রস পান করুন, সালাদে যোগ করুন বা গরম গাজরের স্যুপ তৈরি করে খান। এগুলো প্রস্তুত করা সহজ এবং একইরকম পুষ্টিকর।

ব্রোকলি

সবুজ রঙের এই সবজি সালফারযুক্ত উদ্ভিদ যৌগ যা গ্লুকোসিনোলেট নামে পরিচিত। গবেষণা অনুসারে, এই যৌগ ক্যান্সার, টিউমার এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। এটি ভিটামিন কে এবং ভিটামিন সি দিয়ে ভরা। ব্রোকলি কাঁচা এবং রান্না উভয়ভাবেই খাওয়া যায়।

রসুন

রসুন একটি সুপারফুড যা গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ধরণের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদরোগের উন্নতি করে এবং রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। রসুন ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন সি এবং সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ। এছাড়াও এতে ক্যালসিয়াম, তামা, পটাসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন এবং ভিটামিন বি ১ রয়েছে। তবে খুব বেশি রসুন খাওয়ার সময় আপনাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে কারণ এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন মুখের দুর্গন্ধ, অ্যাসিড রিফ্লেক্স, হজমের সমস্যা এবং রক্তপাতের ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন।

মটর

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ মটর। মাঝারি এককাপ রান্না করা মটর ৯ গ্রাম প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি যেমন ভিটামিন এ, সি এবং কে, রিবোফ্লাভিন, থিয়ামিন, নিয়াসিন এবং ফোলেট সরবরাহ করতে পারে। উচ্চ ফাইবারের কারণে, মটর কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি কমাতেও উপকারী। এটি হৃদযন্ত্রের জন্যও উপকারী ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

মিষ্টি আলু

মিষ্টি আলু তাৎক্ষণিকভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি অনেক স্বাস্থ্যকর, সুস্বাদু এবং এর বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। একটি মাঝারি মাপের মিষ্টি আলু প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ৬, পটাসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ সরবরাহ করে। শুধু তাই নয়, মিষ্টি আলুতে প্রচুর ভিটামিন এ রয়েছে যা স্তন এবং ফুসফুসের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে যে, নিয়মিত মিষ্টি আলু খেলে তা রক্তে শর্করার মাত্রা এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে