অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে যে, সবার সঙ্গে মিশলে বা আড্ডা দিলে তা মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। তাই এটি মাঝেমাঝেই করা উচিত। যদিও এতে কোনো ক্ষতি নেই। তবে নিজের সঙ্গে কীভাবে সময় কাটানো যায় এবং নিজের সঙ্গ পুরোপুরি উপভোগ করতে হয় তা জেনে রাখা ভালো।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সাইকোথেরাপিস্ট ডা. রুহি সতিজা বলেন, ‌‘একা সময় কাটানো মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্য মানুষের আশেপাশে থাকলে তা আনন্দ নিয়ে আসে, কিন্তু এটি মানসিক চাপও তৈরি করে। মানুষ কী ভাববে তা নিয়ে চিন্তিত থাকতে হয়, সবার মনোযোগ পেতে এবং অন্যদের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে গিয়ে নিজের আচরণ পরিবর্তন করতে হয়’।

রুহি সতিজার মতে, ‘একাকি ত্ব’ এবং ‘একা থাকা’র মধ্যে পার্থক্য আছে। তিনি বলেন, নিঃসঙ্গতা নেতিবাচকতা এবং অবহেলার অনুভূতির সঙ্গে জড়িত। একা থাকলে তা আপনার জন্য আরও আরামদায়ক হতে পারে। যখন আপনি একা থাকেন, আপনি বাইরের প্রভাব ছাড়াই থাকতে পারেন। এটি নিজের কাছে নিজেকে বিশ্লেষণ করার জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র। সেইসঙ্গে এটি অন্তর্দৃষ্টি বিকাশে সহায়তা করবে। জেনে নিন একা থাকলে তা কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে-

ব্যক্তিগত অনুসন্ধান

নিজের সঙ্গে সময় কাটানো এবং স্বচ্ছন্দ থাকলে তা আপনাকে আপনার পছন্দ ও অপছন্দ বুঝতে সাহায্য করবে। আপনার আচরণগুলো কেমন এবং কেন আপনি তা করছেন তা গভীরভাবে জানতে পারবেন। অর্থাৎ, নিজেকে জানার জন্য হলেও কিছু সময় একা থাকা জরুরি। 

সৃজনশীলতা

সৃজনশীলতা মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার একটি দুর্দান্ত হাতিয়ার। শখের কাজে সময় ব্যয় করা এবং কিছু তৈরি করার জন্য আপনার মনকে ব্যস্ত রাখতে পারেন। এতে মন ভালো রাখা খুব সহজ হবে। এর জন্য নির্জনতা এবং সময় প্রয়োজন, যা আপনি সব সময় মানুষের মধ্যে থাকলে খুঁজে পাওয়া কঠিন।

ইতিবাচকতা বাড়ায়

সব সময় আপনি অন্যদের সঙ্গ পছন্দ নাও করতে পারেন। যখন আপনি একা থাকেন, একা খেতে যান অথবা নিজের সঙ্গে সময় কাটান, তখন যা করেন তার সবকিছুই আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে। কেউ আপনাকে বিচার করবে না, কী করতে হবে তা বলবে না, বা কোনোরকম মানসিক চাপ দেবে না। একা থাকলে তা নেতিবাচকতা কমিয়ে ইতিবাচকতা বাড়ায়।

উত্পাদনশীলতা

অন্যরা কী করছে বা তারা কীভাবে আপনার বিচার করছেন তা নিয়ে চিন্তা না করে নিজের কাজে মন দিলে তা আপনার উত্পাদনশীলতা বহুগুণ বৃদ্ধি করতে পারে। সফল ব্যক্তিদের দিকে তাকালে দেখবেন, তারা অন্যদের বিচার করার কাজে মেতে থাকে না। 

স্বাধীনতার অনুভূতি

নিজের স্বাধীনতার অনুভূতি পাওয়ার জন্য হলেও কিছুটা সময় একা থাকা প্রয়োজন। এতে নিজে যা ইচ্ছে হয় তা করার কিংবা নিজের মতো করে সময় কাটানোর স্বাধীনতা বজায় থাকে। এই সময়টুকু নিজেকে আনন্দে রাখুন, স্বাধীনতাকে আলিঙ্গন করুন।

অসামাজিক বনাম অসামাজিক

ডা. রুহি সতিজা অসামাজিক এবং অসামাজিক হওয়ার মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করেন। অনেক সময় অসামাজিক আচরণ (সামাজিক যোগাযোগ এড়ানো) মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ হতে পারে, এটি উদ্বেগ বা হতাশার লক্ষণ হতে পারে, যেখানে অসামাজিক হওয়া (একা সময় কাটানো কারণ আপনি এটি উপভোগ করেন) আসলে ভালো হতে পারে।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অবলম্বনে