মীর শামসুল বারী মেহেদী

পিৎজা— খুব বেশি সময় হয়নি বিদেশি এ খাবারের সঙ্গে বাঙালির পরিচয়। তবুও অল্পদিনের পরিচয়েই বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে এটি আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। হোক জন্মদিন, গেট টুগেদার কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, যেকোনো আয়োজনে পিৎজা ছাড়া এখন যেন চলেই না। আর যদি হয় সাধ্যের নাগালে সেরা স্বাদের পিৎজা, তাহলে তো কথাই নেই৷ আর এ অসম্ভবকেই সম্ভব করেছে মীর মেহেদীর ‘পিৎজা বার্গ’।

পিৎজা বার্গের পথচলা কবে থেকে শুরু আর কাদের হাত ধরে শুরু— এ প্রশ্নের উত্তরে মেহেদী বলেন, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পিৎজা বার্গের পথচলা শুরু হয়। আর শুরুর দিকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট দেয় আমার পরিবার, বিশেষত আমার বাবা। আর বন্ধুদের মধ্যে হিয়া মার্কেটিংয়ের দিক থেকে অনেকটা সাহায্য করেছে। সবার সাহচর্যে পিৎজা বার্গের এখন নয়টি ব্রাঞ্চ ঢাকায় যার মধ্যে ছয়টিতে ডাইন-ইনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটিই বেশ ভালোভাবেই চলছে এখন।

পিৎজা বার্গ কেন এত জনপ্রিয়— এ প্রশ্নের উত্তর পেতে শুনতে হবে পিৎজা বার্গের ফাউন্ডার মীর শামসুল বারী মেহেদীর গল্প। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ সম্পন্ন করা এ তরুণ ব্যবসা শুরুর গল্প নিয়ে বলেন, অন্য সবার মতই আমিও স্টুডেন্ট লাইফে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোতে পার্টটাইম চাকরিতে জয়েন করি। সেখান থেকেই উপলব্ধি হয় যে, চাকরিতে নিজের পুরো সম্ভাবনা আমি কাজে লাগাতে পারব না। তাই পিৎজা বার্গের মতো নতুন কিছুর উদ্যোগ নেওয়া।

তিনি জানান, এর আগেও কয়েকটি স্বনামধন্য রেস্টুরেন্টের ফাউন্ডিং মেম্বার ছিলেন। সেগুলোর অভিজ্ঞতা আর নতুন কিছু করার প্রয়াসই পিৎজা বার্গকে এনে দিয়েছে সফলতা। পিৎজা বার্গের প্রতিটি ব্রাঞ্চের ইন্টেরিয়র আর সেরা সার্ভিস সবাইকে আকৃষ্ট করে সহজেই৷

রেস্টুরেন্টের নাম পিৎজা বার্গ কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে মেহেদী বলেন, নাম শুনেই যেন কাস্টমাররা বুঝতে পারেন পিৎজা আর বার্গারের জন্যই মূলত এ রেস্টুরেন্ট। আমাদের রেস্টুরেন্টটি মূলত পিৎজার জন্য জনপ্রিয় হলেও এখানে সবার পছন্দ অনুযায়ী রয়েছে বার্গার, এপেটাইজার, ড্রিংকস ও সেট মেন্যু। এমনকি স্টুডেন্টদের জন্য বাজেট ফ্রেন্ডলি মেন্যুও রয়েছে। সব শ্রেণির সব বয়সের সব টেস্টের মানুষের জন্য পিৎজা বার্গ কাজ করছে।

পিৎজা বার্গের সেরা পিৎজা কোনটি— এ প্রশ্নের উত্তর দিতে কিছুটা হিমশিম খেয়ে ওঠেন মেহেদী। বলেন, আমাদের প্রতিটি পিৎজার আলাদা ফ্যান রয়েছে। বিশেষত মিটি অনিয়ন, সসেজ কার্নিভাল, মিট মেশিন, ফোর ফ্লেভার— পিৎজাগুলোর চাহিদা সবসময় বেশি। অনেক রকম চিজ, টপিংয়ের ব্যবহারে পিৎজাগুলোর স্বাদে কোনো কমতি নেই।  মেহেদী আরও বলেন, জনপ্রিয়তা পাওয়া কঠিন, কিন্তু ধরে রাখার আরও কঠিন। তাই আমরা সবসময় চেষ্টা করি আমাদের পিৎজার স্বাদ প্রতিনিয়ত ইমপ্রুভ করার।

এ পর্যন্ত আসতে বাধা-বিপত্তি পেরোতে হয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের উত্তরে মেহেদী বলেন, সাধারণ পরিবারে ১৯৯১ সালে আমার জন্ম। স্বভাবতই পরিবারের প্রত্যাশা ছিল, হয়তো প্রাইভেট কোনো কোম্পানিতে আমি চাকরি করব।  পরিবারের সদস্যদের বোঝাতে একটু কষ্ট হলেও পরবর্তী সময়ে তারাই আমার সাপোর্ট সিস্টেম হয়ে ওঠেন। আর কোভিডকালে সব ব্যবসায়ীর মতো আমাকেও টিকে থাকতে একটু লড়াই করতে হয়েছে। নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য মেহেদী এ বার্তা পৌঁছে দিতে চান যে, সফলতার জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে লেগে থাকতে হবে।

পিৎজা বার্গ নিয়ে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কী— জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় পিৎজা বার্গের ব্রাঞ্চ তৈরির ইচ্ছে আছে । স্বপ্ন দেখি, একদিন পিৎজা বার্গ বাংলাদেশের মানচিত্র ছাড়িয়ে ইন্টারন্যাশনাল পিৎজা চেইন হিসেবে পরিচিত হবে।