সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেককিছুর পরিবর্তন হচ্ছে। কিছু নতুন জিনিস যোগ হচ্ছে, কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। এদিকে দিনে দিনে মানুষের ঘাণশক্তি কমছে, এমনটাই জানিয়েছে এক গবেষণা। মানুষের নাক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংবেদনশীলতা হারাচ্ছে। গবেষণায় কস্তুরী (হরিণের নাভি থেকে প্রাপ্ত মহামূল্যবান সুগন্ধি) ও শরীরের গন্ধের জন্য দুটি মিউটেশন-সহ সেন্ট বা ঘ্রাণ রিসেপ্টর পাওয়া গেছে, যেগুলো ঘ্রাণশক্তি কম বা অতিরিক্ত তীব্র করে তোলে। 

গবেষণাটি করেছেন চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের সিজিয়া ওয়াং এবং মোনেল কেমিক্যাল সেন্সেসের জোয়েল মেনল্যান্ড। গবেষকরা পিএলওএস জেনেটিক্স নামক একটি জার্নালে এই তত্ত্ব তুলে ধরেছেন, যা প্রকাশ হয়েছে।

গবেষকরা ঘ্রাণশক্তি বিষয়ক এই গবেষণায় ১০০ জন চীনা ব্যক্তি জিনোম পরীক্ষা করেছেন। অংশগ্রহণকারীরা কীভাবে ১০টি ভিন্ন ঘ্রাণ অনুভব করেন, তার সঙ্গে সম্পর্কিত জেনেটিক বৈচিত্র খুঁজে বের করতে পরীক্ষাটি করা হয়। এরপর গবেষকরা তাদের ফলাফল নিশ্চিত করতে ৩৬৪ জন জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় মানুষের ছয়টি গন্ধের জন্য পুনরায় পরীক্ষাটি করেছিলেন। 

পরীক্ষার পরে গবেষকরা দুটি নতুন রিসেপ্টর সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন, যার একটি সুগন্ধিতে ব্যবহৃত সিন্থেটিক মাস্ক বা কস্তুরী (হরিণের নাভি থেকে ব্যবহৃত মূল্যবান সুগন্ধি) সনাক্ত করে এবং অন্যটি মানুষের বগলের গন্ধের একটি যৌগের জন্য।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীরা কস্তুরী এবং বগলের গন্ধ রিসেপ্টর জিনের বিভিন্ন সংস্করণ বহন করে এবং সেই জিনগত বৈচিত্রগুলো ঘ্রাণ উপলব্ধি করার বিষয়টি প্রভাবিত করে। গবেষকরা দেখতে পান যে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা গন্ধ রিসেপ্টরগুলোর পূর্বপুরুষ সংস্করণসহ সংশ্লিষ্ট গন্ধকে আরও তীব্র হিসেবে রেটিং দিয়েছেন। 

পরীক্ষার ফলাফল মূলত এই অনুমানটিকে সমর্থন করে যে, মানুষের এবং অন্যান্য প্রাইমেটদের গন্ধের সংবেদনশীলতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের গন্ধ রিসেপ্টরগুলোর জন্য কোড জিনের সেটের পরিবর্তনের কারণে হ্রাস পেয়েছে।

জেনেটিক বিশ্লেষণটি গন্ধ রিসেপ্টর এবং নির্দিষ্ট গন্ধের জন্য জিনের মধ্যে তিনটি সম্পর্ক চিহ্নিত করেছে, যা বিজ্ঞানীরা পূর্বে রিপোর্ট করেছিলেন। পূর্ব এশিয়া এবং বিভিন্ন জনসংখ্যার উপরে চালানো এই নতুন পরীক্ষার ফলাফল একটি বিষয় স্পষ্ট করে যে, গন্ধ শনাক্ত করার ক্ষমতার অন্তর্নিহিত জেনেটিক্স বিভিন্ন পটভূমির মানুষের মধ্যেই স্থির থাকে।

গবেষণার মূল লেখক বলছেন, জিনোম-ওয়াইড স্ক্যানগুলো গন্ধ উপলব্ধির সঙ্গে যুক্ত অভিনব জেনেটিক রূপগুলোকে শনাক্ত করেছে। এই অনুমানই প্রমাণ করে দিচ্ছে যে, মানুষ এবং প্রাইমেটদের ঘ্রাণজ রিসেপ্টর ভাণ্ডার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে এসেছে।