গ্রামের কাঁচা রাস্তা। রাস্তার দু’ধারে অনিয়মিত সাড়িতে বেড়ে উঠেছে নানান প্রজাতির গাছ। বড় বট গাছটি আকাশ ঢেকে রেখেছে। বট গাছের নিচেই কালি পূজোর স্থান। দিনের আলোতেও জায়গাটি অতিক্রম করলে গা ছমছম করে অজানা আতঙ্কে। বট গাছ এবং কালি পূজোর স্থানকে ঘিরে অনেক গল্প প্রচলিত আছে আশপাশের গ্রামগুলোতে। মুক্তিযোদ্ধার দলটি বট গাছ তলায় এসে বসলো। জায়গাটা নিরিবিলি, তাদের নিরাপদ বিশ্রামের জন্য আদর্শ। 

আপনেরা মুক্তি?
মুক্তিযোদ্ধার দলটি বন্দুক হাতে নিয়ে সতর্কভাবে আশেপাশে তাকালো। কাউকে দেখা যাচ্ছে না। আওয়াজ কোথা থেকে আসলো? কমান্ডার বললেন, সবাই অ্যালার্ট।
আপনেরা মুক্তি?
শব্দের উৎস কড়ই গাছের মগডালে বসে থাকা একটি ছেলে। তার হাতে একটি ধারালো দা। 
কমান্ডার কড়ই গাছের তলায় যেয়ে বললেন, এই ছেলে নিচে নেমে আসো। তোমার হাতের দা নিচে ফেলে দাও।
ছেলেটি দা হাতে নিয়ে গাছ থেকে নামতে থাকে।
কমান্ডার রেগে বললেন, এই ছেলে তোমার হাতের দা ফেলে দাও।
ছেলেটি দা ফেলে দেয়। দা এসে মাটিতে পড়ে। 
কমান্ডার গাছ তলা হতে হাত ধরে ছেলেটিকে দলের মাঝে বসিয়ে বললেন, তুমি কেন এই নির্জন জায়গায় গাছের ডালে বসে আছ?

ছেলেটির চোখে-মুখে আতঙ্কের স্পষ্ট ছাপ। ওর নাম মিলু। বয়স বারো-তের হবে। এখনও গোঁফ দাড়ি মুখে আসেনি। পরনে নীল হাফ প্যান্ট, গায়ে সাদা কালো চেকের শার্ট। শার্টের বিভিন্নখানে দাগ লেগে আছে। চুলগুলো এলোমেলো রুক্ষ, চোখে এসে ঠেকেছে। 

মিলুর বাবা সহজ সরল মানুষ। গ্রামের কিছু লোকের কথায় শান্তি কমিটিতে নাম লেখান। পাকিস্তান পাক স্থান, এইটা ক্যান ভাঙবে?

মিলুর বাবা সহজ সরল মানুষ। গ্রামের কিছু লোকের কথায় শান্তি কমিটিতে নাম লেখান। পাকিস্তান পাক স্থান, এইটা ক্যান ভাঙবে? বাড়িতে তিনি পাকিস্তানের পতাকা টাঙিয়েছিলেন। মিলিটারি দেখলে খুব সম্মান করতেন। সব নেক বান্দা। নিজের পালিত দুটি খাসি তিনি ক্যাম্পে দিয়ে এসেছেন। ক্যাম্পের পাকিস্তানি আর্মি অফিসারদের গুড বুকে তার নাম। একদিন মেজর তাকে ডেকে পাঠান। মিলুর বাবা বড় সালাম দিয়ে মেজরের সামনে দাঁড়ালে, মেজর সিগারেট ফুকতে ফুকতে উর্দুতে বলা কথাগুলো মিলুর বাবা বুঝতে পারলো না। তবে কথাগুলো বোঝানোর লোকের অভাব হলো না। শান্তি কমিটির সদস্যরা মেজরের খেদমতের জন্য কাজ শুরু করেছিল। তেনারা পাকিস্তান রক্ষার জন্য যুদ্ধ করছে। শান্তি কমিটির দায়িত্ব তাদের খেদমতের সকল উপকরণ পদতলে যোগান দেয়া। মিলুর বাবা দেরিতে হলেও বুঝতে পারেন, পাকিস্তান রক্ষার তাদের এই যুদ্ধে কোনো পাক নেই, সবই নাপাক। সে শান্তি কমিটির অন্য সদস্যদের তার অসন্তোষের কথা জানায়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশংসা করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধারাই নেক বান্দা। আমরা সবাই ভুল করেছি। 

সেদিন সন্ধ্যার পরেই মিলিটারি জিপ গ্রামে প্রবেশ করে। শান্তি কমিটির কয়েকজন সদস্য মিলুর বাড়ির সামনে এসে মিলুর বাবা-মাকে ডেকে নেয়। মিলিটারি সদস্যরা মিলুর বাবা-মাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে তোলে। শান্তি কমিটির সদস্যরা পুরো বাড়িতে মিলুকে খুঁজতে থাকে। কেরোসিন আনতে বাজারে যাওয়ায় মিলু ধরা পরা থেকে বেঁচে যায়। বাজারে এই খবর ছড়িয়ে পরে যে, রাজাকাররা মিলুর বাবা-মাকে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে গেছে। এখন তারা মিলুকে খুঁজছে।  

মিলু আর বাড়ি ফিরে যায় না। কামারের দোকানে যেয়ে একটা ধারালো দা নিয়ে দ্রুত পায়ে পশ্চিম গ্রামের দিকে যেতে থাকে।

শান্তি কমিটির সদস্যরা পুরো বাড়িতে মিলুকে খুঁজতে থাকে। কেরোসিন আনতে বাজারে যাওয়ায় মিলু ধরা পরা থেকে বেঁচে যায়।

মিলু মুক্তিযোদ্ধা দলটির সাথে যোগ দিতে চায়। তাদের সে শর্ত দেয়, তারা যদি ক্যাম্প থেকে তার বাবা-মাকে ছাড়িয়ে আনতে তাকে সাহায্য করে, তবে সে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেবে। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মিলুর কাঁধে হাত রেখে বলেন, বাবা তোমার বয়স কম। এত কম বয়সে তোমাকে আমাদের দলে নেয়া উচিত হবে না। যুদ্ধে গেলে যেকোনো সময় তুমি মারা যেতে পারো। আমরা যুদ্ধ করে দেশটা স্বাধীন করলে তোমরা দেশটা গড়বা। তোমাদের বেঁচে থাকতে হবে। আজ রাতে আমরা ক্যাম্পে অপারেশন চালাবো। বেঁচে থাকলে তোমার বাবা-মার সাথে দেখা হতেও পারে। 

মিলু কমান্ডারকে বলল, আমিও আপনাদের সাথে থাকবো। আমাকে একটা রাইফেল দেন, আমিও যুদ্ধ করবো। 
কমান্ডার বললেন, মিলু তুমি রাইফেল চালানো জানো না। আমরা ট্রেনিং নিয়েছি। রাইফেল চালানোর ট্রেনিং নিতে হয়।
মিলু কিছুটা হতাশ কণ্ঠে বলল, রাইফেল লাগবে না। আমার দা আছে।
বয়সে তরুণ একজন মুক্তিযোদ্ধা গুন গুন করে গাইতে লাগলো-
                                                  আমার সোনার বাংলা,আমি তোমায় ভালোবাসি।
                                                  চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে
                                                                  বাজায় বাঁশি।।

কমান্ডার কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন, জয়নাল এখনো আসছে না কেন? কোনো সমস্যা নয়তো?
মিলু জিজ্ঞেস করল, কে আসবে? আরও মুক্তি আসবে?
কমান্ডার বললেন, আমাদের ইনফরমার আসবে। ওর বাড়ি ক্যাম্পের কাছে। ও কসাই, ক্যাম্পে মাংস সাপ্লাই দেয়। ক্যাম্পের আজকের খবর জানা লাগবে।
মিলু কিছুক্ষণ চুপ থেকে সাহস করে বলল, আপনারা কসাই জয়নাল চাচার জন্যে বসে আছেন?
কমান্ডার অবাক হয়ে বললেন, তুমি তাকে চেন?
মিলু বলল, কালো, মোটা আর বড় ভুরি আছে না ওনার?
কমান্ডার বললেন, হ্যাঁ, ঠিক আছে।
মিলু বলল, উনি তো শান্তি কমিটির লোক। আমার সামনে এক হেন্দুরে কোপায়া মারছে। আমার আব্বাও সাথে আছিল সেদিন। আব্বা সেদিন ফিট খাচ্ছিল। রক্ত দেখলে ফিট খায় আব্বা। 

আমরা কাকে বিশ্বাস করবো? এই ছেলেটিকে নাকি জয়নালকে? এই ছেলে যে সত্য বলছে তাইবা আমরা কিভাবে বুঝবো? 

জয়নালের তথ্যের ভিত্তিতেই আজ রাতে ক্যাম্পে অপারেশন চালানোর কথা। এখন তো সব কিছুতে প্যাঁচ লেগে গেল। এখানে আমাদের অবস্থান করাও নিরাপদ নয়। কমান্ডার চিন্তিত হয়ে পড়লেন।
একজন সহযোদ্ধা কমান্ডারকে বললেন, আমরা কাকে বিশ্বাস করবো? এই ছেলেটিকে নাকি জয়নালকে? এই ছেলে যে সত্য বলছে তাইবা আমরা কিভাবে বুঝবো? 
কাউকে তো বিশ্বাস করতেই হয়। কবিগুরু বলেছেন, মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ। তবে জলের গভীরতা এক পা দিয়ে মাপতে হয়। একটা গামছা দিয়ে মিলুর মুখ বেধে ফেল। ওকে নিয়ে চলো। দ্রুত আমাদের এই এলাকা ছাড়তে হবে।

কিছুদূর যেতেই পাকিস্তানি মিলিটারি গাড়ির শব্দ পাওয়া যায়। গাড়ি বহর থেমে যায়। সৈন্য দল পায়ে হেঁটে এগিয়ে চলে। তাদের সাথে কিছু অসামরিক লোক দেখা যায়, তবে বেশি দূরে থাকায় তাদের চেহারা স্পষ্ট দেখা যায় না। তারা কি বট গাছ তলার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে? মিলুকে শক্ত করে ধরে রাখো।

মুক্তিযোদ্ধার দলটি দ্রুত চলতে থাকে। মিলু কয়েকবার পালানোর চেষ্টা করে। প্রতি বার ব্যর্থ হয় সে। কুড়িগ্রাম মহকুমার রৌমারী হয়ে জিঞ্জিরাম নদী পার হয়ে মুক্তিযোদ্ধার দলটি তাদের ক্যাম্পে পৌঁছায়। 

আবার নতুন করে আক্রমণ কৌশল সাজাতে হবে। জয়নালের দেয়া তথ্যের উপর কমান্ডার আর ভরসা করতে পারছেন না। আচ্ছা, মিলুকে কি ওরা ল্যান্ডমাইন হিসেবে ব্যবহার করতে পারে? মিলু ওর বাবা-মাকে ছাড়াতে আর্মিদের যেকোনো শর্তে রাজি হতে পারে। ডিলেমা! গ্রেট ডিলেমা।

কমান্ডার আলাদা করে মিলুকে ডেকে নিলেন। মিলুর চোখের দিকে চেয়ে বললেন, মিলু তোমার বাবা তো শান্তি কমিটির সদস্য থাকার সময় অনেক বার আর্মি ক্যাম্পে গিয়েছেন- তাই না? তুমি কখনো সাথে গিয়েছিলে?

স্যার আমার মা-বাবা বেঁচে থাকলে এখানে নিয়ে আসবো। তারপর আমি আপনাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধে যাবো। কমান্ডার হেসে বলল, তাই হবে।

মিলু  বলল, হ দুই বার গেছি। একবার আব্বার সাথে গেছি আর্মি দেখতে, আরেকবার ক্যাম্পে আমাদের খাসি দুইটা দিতে গেছি। আমি যে স্কুল ঘরটাতে ক্লাস করতাম সেইটা এখন রাইফেল দিয়া ভরা। বড় অফিসার হেড স্যারের অফিস ঘরে থাকে। যাদের ধরে আনে তাদের মধ্যে মেয়েদেরকে অফিস ঘরের দক্ষিণ পাশের ঘরটাতে রাখে আর ছেলেদের মেরে ফেলে।
কমান্ডার জিজ্ঞাসা করলেন, ঐ ক্যাম্প তোমার স্কুল ছিল?
মিলু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।
কমান্ডার বেশ আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলেন, মিলু, ক্যাম্পের কোথায় কী আছে, কোথায় আর্মি পাহারা আছে, অস্ত্রের গুদাম সব কিছু তুমি বলতে পারবে?
মিলু বলল, হ, সব কিছু তো আমি দেখছি। ক্লাস ঘরের পেছন দিয়ে বাইরে বের হওয়া যায়, বাইরে থেকে ভেতরেও ঢোকা যায়। কতবার সেদিক দিয়ে স্কুল থেকে পালাইছি। এক বার ভাবছিলাম রাইফেলের ঘরটাতে ঢুকে একটা রাইফেল নিয়া আসি। কিন্তু আমি একা তো ওদের সাথে পারবো না।

কমান্ডার দলের সদস্যদের জানিয়ে দিলেন, আগামীকাল মাঝ রাতে পাকিস্তানি আর্মি ক্যাম্পে অপারেশন চালানো হবে। মিলুকে কিছু জানানো হয়নি। সিদ্ধান্ত হয়, মিলুকে সাথে নেয়া হবে। অপারেশনের একটি বিশেষ অংশ সে। তবে মিলুকে সাথে নেয়া, না-নেয়া নিয়ে দলের মধ্যে অনেক সময় ধরে আলোচনা চলে। মিলু যদি শত্রু পক্ষের দেয়া টোপ হয় তবে মিলুর কাছ থেকে ওরা অনেক কিছু জেনে যাবে। 

কমান্ডার ঝুঁকি নিলেন। পরদিন সন্ধ্যার পর মিলুকে অপারেশনের কথা জানানো হলো। তাকে কী করতে হবে তা বলা হলো। মিলুকে বেশ আনন্দিত মনে হলো। মিলু কমান্ডারকে বলল, স্যার আমার মা-বাবা বেঁচে থাকলে এখানে নিয়ে আসবো। তারপর আমি আপনাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধে যাবো। কমান্ডার হেসে বলল, তাই হবে।

নৌকাযোগে মুক্তিযোদ্ধার দল শত্রু ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হলো। অমাবস্যার রাত। সকলে চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। ছোট নদী। মিলিটারি জাহাজ থাকার সম্ভাবনা নেই, তবে রাজাকারেরা মাঝে মাঝে নৌকা নিয়ে টহল দেয়। ক্যাম্পের কাছে পৌঁছাতে কিছুটা বেশি সময় লেগে যায়। দ্রুত অপারেশনে যেতে হবে। মিলু-সহ একজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের পেছনের জঙ্গল হয়ে অস্ত্রাগারের কাছে চলে আসে। মিলুর একমাত্র কাজ ক্যাম্পের অস্ত্রাগারে ঢোকার পথ তার সাথের যোদ্ধাকে দেখিয়ে দেয়া। মিলু পথ দেখিয়ে দেয়। কিন্তু ছিদ্র ছোট হওয়ায় তরুণ মুক্তিযোদ্ধা অনেক চেষ্টা করেও অস্ত্রাগারে প্রবেশ করতে পারে না। মিলু নিচু স্বরে বলল, আমি ঢুকতে পারবো। আপনার পিঠের ব্যাগটা আমাকে দেন।
তরুণ মুক্তিযোদ্ধা বলল, তুমি ছোট মানুষ। তোমাকে এই বিপজ্জনক কাজে কিভাবে পাঠাবো? 
মিলু বলল, আমি পারবো। আপনি চিন্তা করবেন না। কমান্ডারকে আমরা এ ঘটনা জানাবো না। 
তরুণ মুক্তিযোদ্ধার হাতে অন্য কোনো পথ নেই। অস্ত্রাগারের ভেতরে বিস্ফোরক রেখে আসতেই হবে। তিনি মিলুকে অস্ত্রাগারে বিস্ফোরকের ব্যাগ রেখে যত দ্রুত সম্ভব বেরিয়ে আসতে নির্দেশ দিলেন।
মিলু হাতে বিশেষ কায়দায় ব্যাগ নিয়ে দেয়াল বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। দেয়াল ও টিনের চালার মাঝের সরু জায়গা দিয়ে অস্ত্রাগারে প্রবেশ করে। 

যাদের ধরে আনে তাদের মধ্যে মেয়েদেরকে অফিস ঘরের দক্ষিণ পাশের ঘরটাতে রাখে আর ছেলেদের মেরে ফেলে।
কমান্ডার জিজ্ঞাসা করলেন, ঐ ক্যাম্প তোমার স্কুল ছিল?

মিলুকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সে এত দেরি করছে কেন? তরুণ মুক্তিযোদ্ধা কয়েকবার মিলুকে মৃদু স্বরে ডাকতে থাকে। মিলুর সাড়া পাওয়া যায় না। ক্যাম্পের ভেতরে হঠাৎ গুলির শব্দ ও চিৎকার শোনা যায়। এর মধ্যে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। মুক্তিযোদ্ধার দল দুদিক থেকে গ্রেনেড ও গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে আসতে থাকে। শত্রু বাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালায়। তবে যুদ্ধ রশদের অভাব ও অতর্কিত আক্রমণে অল্প সময়ে তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। 

বন্দি অনেক নারী পুরুষের মুক্তির কান্না শোনা যায়। মুক্তিযোদ্ধার দল ক্যাম্পে প্রবেশ করে। মিলু ও তার সাথে পাঠানো মুক্তিযোদ্ধাকে তারা ডাকতে থাকে। মুক্ত নারী-পুরুষের কান্না ছাড়া কিছু শোনা যায় না। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। তাদের প্রায় সকলে একটি ছেলের কথা বলছিল, যে তার বাবা-মাকে খুঁজছিল, আর তাদের এখান থেকে পালাতে বলছিল। এরই মধ্যে পাকিস্তানি আর্মিরা গুলি চালানো শুরু করে। 

কমান্ডার ক্যাম্পের ঘরগুলোর দিকে তাকালেন। তখনও আগুন জ্বলছে। কত অন্যায়, কত পাপ জমে গেছে এই স্থানটিতে। আগুনে পুড়ে সে কি পবিত্র হচ্ছে? 

কমান্ডারকে প্রতিবার সম্মুখযুদ্ধে মৃত্যু ঝুঁকি নিতে হয়, কাঁধে বইতে হয় সহযোদ্ধার লাশ। আজও বইতে হবে। প্রতিবার বিজয়ের আনন্দের সাথে থাকে সহযোদ্ধা হারানোর কষ্ট। তবে আজ আছে কষ্টের সাথে অপরাধবোধ। মিলুকে মৃত্যুর মুখে ফেলার অপরাধবোধ। এখনই যদি চিৎকার করে মিলু বলত, স্যার, আমি বেঁচে আছি।

কমান্ডার ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। সহযোদ্ধারা ডাকছে, কমান্ডার চোখের জল মুছে অমাবস্যার আকাশের দিকে চেয়ে বলেন, মিলুরা হারিয়ে যায় না, চাঁদ হয়ে পথ দেখায়।

লেখক পরিচিতি
রবি চক্রবর্ত্তী। গল্পকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা।
প্রভাষক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, গাইবান্ধা সরকারি কলেজ। 

এইচকে