ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ড সংক্রান্ত দুর্যোগ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং এ সংক্রান্ত প্রস্তুতিতে উৎসাহিত করতে সুপার-সমকাল আর্থকুয়েক প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন দুই সাংবাদিক এবং চার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। মঙ্গলবার (১৭ মে) বিকেলে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও নগদ অর্থ তুলে দেওয়া হয়। দেশে প্রথমবারের মতো এ পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে।

পুরস্কার প্রাপ্ত দুই গণমাধ্যকর্মী হলেন— দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার বাহরাম খান ও বাংলা ভিশন অনলাইনের স্টাফ রিপোর্টার কেফায়েত শাকিল। বেসরকারি খাতের চারটি প্রতিষ্ঠানও বিজয়ী হয়।

বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এফআর খান, প্রিমিয়ার ফুটওয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, বিবিএস ক্যাবলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ বদরুল হাসান ও ইউনাইটেড শক্তি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. তাজমির আলম পুরস্কার গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ত্রাণ ও দুর্যোগ সচিব মো. কামরুল হাসান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা চেম্বারের সিনিয়র সহ সভাপতি আরমান হক। সুপার-সমকাল আর্থকুয়েক প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যাওয়ার্ডের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউএনইএসসিএপি সাসটেন্যাবল বিজনেস নেটওয়ার্ক টাস্কফোর্স অন ডিজাস্টার অ্যান্ড ক্লাইমেট রিস্ক রিডিউশনের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের সুপার প্রকল্পের কনসোর্টিয়াম ম্যানেজার আ ম নাসির উদ্দিন, ইউনাইটেড পারপাসের বাংলাদেশে নিযুক্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রীরামাপ্পা গনচিকারা এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ’র অপারেশন্স ও প্রোগ্রাম কোয়ালিটি বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর চন্দন জেড গোমেজ।

২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যক্রম চলতি বছরের প্রতিযোগিতার আওতাভুক্ত হয়। আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে একটি জুরি বোর্ডের মাধ্যমে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নির্বাচিত করা হয়। জুরি বোর্ডে ছিলেন— বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান ও সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান।

স্ট্রেংদেনিং আরবান পাবলিক প্রাইভেট প্রোগ্রামিং ফর আর্থকুয়েক রেজিলিয়েন্স (সুপার) প্রকল্প একটি কনসোর্টিয়াম প্রকল্প। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সিভিল প্রটেকশন অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান এইডের (ইসিএইচ) আর্থিক সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), ইউনাইটেড পারপাস এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ।

পুরস্কার বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ সচিব মো. কামরুল হাসান বলেন, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বে রোল মডেল। সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এ ক্ষেত্রে প্রাইভেট সেক্টর বড় ভূমিকা রাখতে পারে। প্রাইভেট সেক্টরের অংশগ্রহণে আরও সফলতা আসবে বলে বিশ্বাস করি।

সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগ প্রবণ দেশ। কিন্তু এ দেশের মানুষ অত্যন্ত সহনশীল। দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের অর্জন বেশ প্রশংসনীয়। তবে দেশে ভূমিকম্পসহ নানা দুর্যোগের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এসব দুর্যোগ মোকাবিলায় সচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যম বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সমকালে এ ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।

এর আগে সকালে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং সুপার প্রজেক্ট কনসোর্টিয়াম যৌথভাবে ‘দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক জাতীয় সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে। এতে বক্তারা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেকোনো দেশের জনগণের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উৎপাদন ও সরবরাহ থেকে শুরু করে সার্বিক বিপণন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে। এ অবস্থায় যেকোনো দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় দক্ষতা অর্জনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করা অপরিহার্য।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, দেশি বিনিয়োগ আরও নিরাপদ ও উৎসাহিতকরণে দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবিলায় দক্ষতা অর্জন খুবই জরুরি। এছাড়া এ ক্ষেত্রে সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বয় একান্ত অপরিহার্য।

তিনি বলেন, দেশের বেসরকারি খাতের অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকা চেম্বারের সহায়তা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ‘প্রাইভেট সেক্টর ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে, যেটি আমাদের বেসরকারি খাতের দক্ষতা আরো সমৃদ্ধ করবে।

ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেন এল ডেনেইগা বলেন, ঝুঁকি মোকাবিলায় তার দেশ জাতীয় বাজেটের প্রায় পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ দিয়ে থাকে। ২০১৮ সালে সারা পৃথিবীতে প্রথমবারের মতো ফিলিপাইন ‘প্রাইভেট সেক্টর ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার’ স্থাপন করেছে।

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা অর্জনে বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

ইকোর প্রধান এ্যানা অরল্যানডিনি বলেন, টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রতিটি দেশকেই তাদের নিজস্ব কাঠামোর সঙ্গে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ত করা অপরিহার্য।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাব খুবই বেশি। এ ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের বেসরকারি খাতকে কার্যকর ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন।

এসএসএইচ