জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামরুন্নাহার শোভা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলায় হয়রানি ও সব মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ)।

মঙ্গলবার (২৪ মে) দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সামনে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে বিএইচআরএফর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয় নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামসহ অন্যান্য সাংবাদিকরা।

মানববন্ধনে বক্তারা মিথ্যা মামলায় সাংবাদিক পরিবারকে হয়রানি ও একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, হ্যান্ডকাফ পরানো ও গালাগালি করায় কাশিমপুর থানার ওসি মাহবুবে খোদা, ওসি (তদন্ত) মিজান, এসআই তানভীরসহ সেই ভূমিদস্যু অপরাধ চক্রের বিচার দাবি করেন। এছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিক পরিবারের বিরুদ্ধে করা মিথ্যে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ সময় সাংবাদিক কামরুন্নাহার শোভা বলেন, একজন এসপির আমল থেকে গাজীপুরে ২০১৮ সাল থেকে আমাদের নামে গরু চুরি, মুরগি চুরি, চাঁদাবাজি, লুটপাট, ছিনতাইয়ের মামলা দেওয়া হচ্ছে একই ধরনের কথা লিখে। এ নিয়ে একই স্ক্রিপ্টে তিনটি মামলা হলো। এই অপরাধী চক্র কীভাবে পুলিশের সহায়তা নিয়ে মিথ্যা মামলা দেয়। পুলিশ বলে, উপরমহলের চাপ, বিচারপতি, জেলা জজের কথা। তারা কারা? এতে কী সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় না?

মানববন্ধনে বিএইচআরএফ সভাপতি রাশেদ রাব্বি বলেন, আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম একজন সাংবাদিক যখন তার অফিসে কর্মরত, তখন ঢাকার বাইরে একটি জেলার একটি থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হলো। তিনি মুরগি, গরু, টিন চুরির মামলায় আসামি হলেন। শুধু মামলা দেওয়া হলো তাই নয়, তার পরিবারের সদস্যদের হেনস্থা করা হলো। ৮০ বছর বয়সী একজন প্রবীণ শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে নাজেহাল করা হলো।

তিনি বলেন, আমরা সাংবাদিকেরা দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সুখ-দুঃখ তুলে ধরি। কিন্তু আমরা যখন জটিলতায় পড়ি, নির্যাতনের শিকার হই, আমাদের কথা বলার কেউ থাকে না।

রাশেদ রাব্বি আরও বলেন, যে খামার থেকে মুরগি চুরির কথা বলা হয়েছে, সেখানে কোনো খামার নেই। আরো যেসব বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তার কিছুই নেই। তাহলে একজন ওসি কীভাবে সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিলেন?  আমি ওই ওসি ও তার সহকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাশেদ রাব্বি বলেন, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই থানায় কী হয়েছে এবং এই মামলায় কারা সংশ্লিষ্ট আছেন তা একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি করে তদন্ত করা হোক। একজন সিনিয়র সাংবাদিকের পরিবারকে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হচ্ছে- তার বিচার আপনার কাছে চাচ্ছি। এই সিনিয়র সাংবাদিক ও তার পরিবারকে যেন আর কোনো হয়রানির শিকার হতে না হয় সে দাবি আপনার কাছে জানাচ্ছি। প্রয়োজনে এর সুরাহার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করব।

নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সহ-সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী ওসি নিজেই স্বীকার করেছেন মামলার এজাহারে সব সত্যি কথা লেখা হয় না, তার এ কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে মামলাটি মিথ্যা। এ ধরনের মিথ্যা মামলা আগেও হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে কামরুন্নাহার শোভা আপার পরিবারকে হয়রানি করা হচ্ছে। সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে অতিদ্রুত এসব মিথ্যা মামলার প্রত্যাহার ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।

মানববন্ধনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস মোবারক বলেন, দেশের বিভিন্ন আদালতে এখন ৪০ লাখ মামলা ঝুলে আছে। এ ধরনের মিথ্যা মামলার কারণে মামলার জট বাড়ছে। সরকারের প্রতি অনুরোধ এ ধরনের মিথ্যে মামলার সংখ্যা আর বাড়াবেন না।

নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সোহেল মাহমুদ বলেন, মিথ্যা কারণে সাংবাদিক পরিবারের বিরুদ্ধে এ হয়রানি অমানবিক। সাংবাদিক পরিবারের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও হয়রানি বন্ধের জন্য সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।

টিআই/ওএফ