জেমকন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও আজকের কাগজের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক কাজী শাহেদ আহমেদ ছিলেন স্রোতের বিপরীতে হেঁটে যাওয়া মানুষ। তিনি নিজেকে কোনো এক বিষয়ে গণ্ডিবদ্ধ করে রাখেননি। তিনি ছিলেন একজন নির্ভীক সাংবাদিক, যিনি স্ফুলিঙ্গ তৈরি করে প্রত্যেককে তার মতের মধ্যে নিয়ে আসতে পারতেন।

শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় জাদুঘরে তার প্রয়াণ উপলক্ষ্যে আয়োজিত নাগরিক স্মরণ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। 

সভায় সাবেক মুখ্যসচিব কামাল আহমেদ বলেন, সব বর্ণাঢ্য জীবন স্মরণীয় হয় না। কাজী শাহেদ আহমেদের জীবন আগামী প্রজন্মের জন্যে স্মৃতিময় ও স্মরণীয়। পৃথিবীতে সবকিছু হারায় না। কর্ম হারায় না, স্বপ্ন হারায় না। নিবেদনের ভেতরে অসাধারণ কিছু যদি থাকে, হারাবে না। তিনি যে কাজগুলো করেছেন কাজী শাহেদ আহমেদ তেমন একজন। জেমকন সাহিত্য পুরস্কারের সঙ্গে নাম সম্পৃক্ত করতে পেরে আনন্দিত। সাহিত্য পাতা ছিল আজকের কাগজে। তার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলতেন কী স্বাধীনভাবে তারা কাজ করতো।

কাজী শাহেদ আহমেদের ছেলে কাজী আনিস আহমেদ শুরুতে তার বক্তব্যে বলেন, আমি মনে করি কাজী শাহেদ আহমেদকে নিয়ে কথা শুনতে আজ আপনাদের ভালো লাগবে। আমি নিজেও আগ্রহী। বাবার ব্যক্তিত্ব যেমন ছিল তাকে ঘিরে যত গল্প তা মানুষের জন্য মনোরঞ্জনেরও। তিনি একজন প্রতিভাবান, কর্মব্যস্ত মানুষ ছিলেন। স্বপ্ন দেখতে ও দেখাতে ভালোবাসতেন। কাজের ব্যাপারে তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ ও অধ্যাবসায়ী।

এক সময়ে আজকের কাগজে কাজ করেছিলেন জনপ্রিয় সাংবাদিক জ ই মামুন। তিনি বলেন, কাজী শাহেদ আহমেদ ইন্সপিরেশন। দেখে কথা শুনে সাহস পেতাম যা কর্মজীবনে কাজে লেগেছে। তার সব কাজ আমার মতো তরুণ প্রাণকে উদ্বুদ্ধ করত।

আলোচনায় অ্যাপেক্স গ্রুপের নাসিম মন্জুর বলেন, কাজী শাহেদ আহমেদের স্মরণসভায় কথা বলতে পেরে কৃতজ্ঞতা। 

অনুষ্ঠানের শুরুতে দেখানো স্লাইড শোর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক ব্যক্তির কতরকম রূপ। কাজী শাহেদ একাধারে প্রকৌশলী, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক।

লে. জে. (অব) জহিরুল আলম কাজী শাহেদ আহমেদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি নিজেকে সবসময় কাজী শাহেদের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেই। মুক্তিযুদ্ধকালে আমি এইচএসসি শিক্ষার্থী, যুদ্ধ থেকে ফিরে পরীক্ষা দেই। বুয়েটে পড়া শুরু করার সময়ে সেনা পরীক্ষায় যাই। বাংলাদেশ যে একাডেমি চালু করতে পারবে কারোর চিন্তায় আসেনি। ওখানে কাজী শাহেদ আমাদেরকে রিসিভ করেছিলেন। সবার যেতে হবে। তিনি যেখানে আছেন, আমি বিশ্বাস করি তিনি শান্তিতে আছেন। 

কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আমি যখন নূরজাহান উপন্যাস লিখলাম। কাজী শাহেদ আহমেদ সেটা তার কাগজে ধারাবাহিকভাবে ছাপলেন। আমি যেভাবে জড়িয়ে পড়লাম, তিনি যখনই লিখতেন আমাকে পাঠাতেন। তিনি সংবাদপত্রের চেহারা বদলে দিয়েছিলেন। আজকের যে পত্রিকা সেটা তার হাত ধরে এসেছে। বাঙালিরা যখন আত্মজীবনী লেখেন, কিছু লুকাননি। তার কষ্টের দিনগুলোর কথা আনন্দ নিয়ে লিখেছেন। কোনো কোনো মানুষ মৃত্যুকে জয় করে তার কাজের মধ্য দিয়ে। তিনি আমাদের নয়নে নয়নে থাকবেন। 

কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম বলেন, একসময় সবাইকে চলে যেতে হয়। যেসব মানুষ জীবনে দাগ রাখতে পারেননি তাদের স্মৃতি কেবল থাকে আপনজনদের কাছে, যারা দাগ দিতে পেরেছেন তাদের সবাই মনে রাখেন। কাজী শাহেদ আহমেদ স্মরণযোগ্য সবার কাছে। তিনি ছিলেন দায়িত্বশীল পারিবারিক মানুষ। তার মতো সাহসী নির্ভীক সাংবাদিক আমি কম দেখেছি। 

কাজী শাহেদ আহমেদের ছেলে ও জেমকন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, বিপদে আনন্দে জীবনের পূর্ণতা পেতে চেয়েছেন। তিনি কর্মবীর ছিলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। উনি সন্তানদের বলতেন, যখন যে কাজ করবে শতভাগ দেবে।

এমএ