রোকেয়া হায়দার

সংবাদ পাঠিকা, ভাষ্যকার ও সাংবাদিক রোকেয়া হায়দার ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধানের পদ থেকে ২৮ মে (শুক্রবার) অবসর নিয়েছেন। তিনি ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রায় দুই যুগ।

আন্তর্জাতিক মাল্টিমিডিয়া প্রতিষ্ঠানের বাংলা বিভাগে তিনিই প্রথম নারী প্রধান ছিলেন। রোহিঙ্গা ভাষায়ও অনুষ্ঠান চালু করেছেন তিনি।

স্পষ্ট উচ্চারণ, বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরে রোকেয়া হায়দার খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে যান অল্পদিনেই। বাংলাদেশে যখন টেলিভিশন ছিল না তখন ভয়েস অব আমেরিকা বেতারের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল। পেশার প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ স্থাপন করে উদাহরণ হয়ে আছেন রোকেয়া হায়দার। অবসর গ্রহণের পর শ্রোতারা তার স্মৃতিচারণ করছেন। 

তারই গুণমুগ্ধ আকবর হায়দার কিরণ তার নিজের ফেসবুক পেজে মন্তব্য করেছেন, ৪০ বছর সময় কাটল ভয়েস অফ আমেরিকায় রোকেয়া আপার। পরম শ্রদ্ধেয় রোকেয়া আপা ভিওএ থেকে অবসর নিলেন। এই খবর শোনে অনেকেরই চোখের পাতা ভিজে গেছে।’

জানা গেছে, ১৯৮১ সালে ভয়েস অব আমেরিকার আমন্ত্রণ পেলে তিনি চলে গিয়েছিলেন ওয়াশিংটন ডিসিতে। সংবাদ পাঠ শুধু নয়, সাংবাদিকতার দায়িত্বও নিতে হয় তাকে। রোকেয়া হায়দার ভিওএ বাংলা বিভাগের ম্যানেজিং এডিটরের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। 

২০১১ সালের জুন মাস থেকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। রোকেয়া হায়দারের বাড়ি যশোর হলেও বাবা আবু বকর ফারাজীর কর্মসূত্রে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। তার মা মেহেরুন্নেসা বকর। মা-বাবার ছয় সন্তানের মধ্যে রোকেয়া তৃতীয়। তার বড় বোন সুফিয়া আমিন নজরুল সংগীতশিল্পী ছিলেন। 

রোকেয়া কলকাতার সেন্ট জন্স বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ইডেন কলেজেও পড়াশোনা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন। ষাটের দশকে স্বামী হায়দার তাকিরের কর্মসূত্রে চলে যান চট্টগ্রামে। তবে তার আগেই রোকেয়ার বেতার জীবন শুরু হয় কলকাতায়। স্কুল ও কলেজে পড়াশোনাকালীন বেতারে নাটক ও অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। চট্টগ্রাম বেতারে ১৯৬৮ সালে আঞ্চলিক সংবাদ পাঠ দিয়ে শুরু তার সংবাদ উপস্থাপনা। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বেতার ও টিভির নিয়মিত সংবাদ পাঠ শুরুর মাধ্যমে পেশাদার সাংবাদিকতার শুরু হয়।

আমেরিকায় যাবার পর সাংবাদিকতার পাোপাশি রোকেয়া হায়দার বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন।  ১৯৯০ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। তখনকার প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ তার হাতে পদক তুলে দিয়েছিলেন। তিনি মাদার তেরেসার সাক্ষাৎকার, বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিকের খবর সরাসরি মাঠ থেকে সংগ্রহ ও সরবরাহ করেছেন। বাংলাদেশে নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুষ্ঠানের জন্য ভয়েস অব আমেরিকার প্রোগ্রাম অ্যাওয়ার্ড পান। আমেরিকার আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব বইমেলা, রবীন্দ্র নজরুল সম্মেলন, ফোবানা সম্মেলন, বাংলা স্কুল- সব আয়োজনেই তার উপস্থিতি ছিল উজ্জ্বল।

রোকেয়া হায়দার অতীতে তার পেশাগত জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। এখানে কাজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বলে কোনো বৈষম্য থাকতে পারে না। নিজের মেধা, যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়েই এই পেশায় সবাইকে টিকে থাকতে হয়। 

পিএসডি/ওএফ