দেশে নাগরিক অধিকার চর্চার পরিসর ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে এবং সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের ওপর সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে গবেষণাভিত্তিক অধিকার সংগঠন ‘ভয়েস’।

শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংগঠনটির সর্বশেষ ‘মিডিয়া মনিটরিং’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি উন্মোচন করা হয়। এতে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের ওপর হামলা, হয়রানি এবং অনলাইনে লিঙ্গভিত্তিক অপতথ্য ছড়ানোর বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলা ট্রিবিউনের নগর সম্পাদক উদিসা ইসলাম, ইউএনডিপির সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির যোগাযোগ বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শদাতা এস এম মনজুর রশিদ, মানবাধিকারকর্মী ও গবেষক রেজাউর রহমান লেনিন এবং ওয়ান ফিউচার নেটওয়ার্কের ফেলো ও গবেষক মাহপারা আলম।

দেশের প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল এবং তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরের পর্যালোচনার ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মতপ্রকাশ, বাকস্বাধীনতা, সমাবেশ ও সংগঠনের অধিকারের মতো মৌলিক মানবাধিকারগুলো গভীর সংকটে পড়েছে।

অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী ও শিক্ষাবিদরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা, গণগ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলার প্রবণতা এবং কবি-লেখকদের মতপ্রকাশের কারণে হয়রানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের নগর সম্পাদক উদিশা ইসলাম বলেন, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। একেকটি মামলায় ৩০০ থেকে ৫০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হচ্ছে, যার মধ্যে সাংবাদিকরাও রয়েছেন। এ ধরনের মামলা ভয়ভীতি প্রদর্শনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এর বিরুদ্ধে তিনি জোর সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

মানবাধিকারকর্মী ও গবেষক রেজাউর রহমান লেলিন বলেন, এই প্রতিবেদনটি বর্তমান সময়ের সংকুচিত গণতান্ত্রিক ও নাগরিক পরিসরের একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। এর সুপারিশ ও বিশ্লেষণগুলো শুধু গবেষণার আলমারিতে বন্দি না রেখে অবশ্যই নীতিনির্ধারকদের টেবিলে পৌঁছাতে হবে।

লিঙ্গভিত্তিক অপতথ্য ছড়ানো রোধে ফেসবুক, টিকটকসহ বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার আহ্বান জানান ওয়ান ফিউচার নেটওয়ার্কের ফেলো ও গবেষক মাহপারা আলম। তিনি বলেন, যেসব কনটেন্ট লিঙ্গপরিচয়, শ্রেণি, জাত বা সংস্কৃতিগত কারণে বিশেষ কোনো গোষ্ঠীকে অপমান করে, তা দ্রুত শনাক্ত করে নামিয়ে ফেলার কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

ইউএনডিপির সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির যোগাযোগ বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শদাতা এস এম মনজুর রশিদ বলেন, ডিজিটালাইজেশনের ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি কিছু গুরুতর চ্যালেঞ্জও রয়েছে। নাগরিক ও ডিজিটাল পরিসরে যে দমন-পীড়ন চলছে, তা মোকাবিলায় সমাজে বিরাজমান নীরবতা ভাঙা দরকার।

ভয়েস’-এর নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন, নারীদের অনলাইন ও জনপরিসরে অংশগ্রহণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে লিঙ্গভিত্তিক অপতথ্য ও প্রযুক্তিভিত্তিক সহিংসতা। তাই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী আইন তৈরি ও কার্যকর করার পাশাপাশি ডিজিটাল সাক্ষরতা ও নাগরিক শিক্ষাকে তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত করতে হবে। তবেই জনপরিসরে গণতান্ত্রিকভাবে নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

এমজে