ইউনিসেফের ১৬তম মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২১ পেলেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আদনান রহমান ও জসীম উদ্দীন। শিশুদের অধিকার রক্ষা বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরির জন্য বিশেষ ক্যাটাগরিতে দুটি পৃথক পুরস্কার পেয়েছেন তারা। এছাড়া ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক মনি আচার্য্য বিশেষ ক্যাটাগরিতে পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) প্রতিবছর এই পুরস্কার প্রদান করে। এবারের মীনা অ্যাওয়ার্ড-এ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেবল ঢাকা পোস্ট দুটি পুরস্কার অর্জন করল।

সোমবার (২০ ডিসেম্বর) ইউনিসেফ বাংলাদেশের ফেসবুক পেজ থেকে পরিচালিত ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ঢাকা পোস্টের দুই সংবাদকর্মীসহ পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। 

ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আদনান রহমান বিশেষ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন। তার বিষয় ছিল রোহিঙ্গা শিশু শরণার্থী। তিনি ‘ওদের শৈশব কাটে ভয়-আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তায়’ শিরোনামে প্রতিবেদনের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জসীম উদ্দীনও বিশেষ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন। তার বিষয় ছিল বাল্য বিবাহ। এ বিষয় নিয়ে ‘নিরাপত্তা অজুহাত, আইনের ফাঁক বাড়াচ্ছে বাল্যবিয়ে!’ শিরোনামে প্রতিবেদনের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

পুরস্কার হিসেবে উভয়েই নগদ ৫০ হাজার টাকা করে পাবেন। এছাড়া তাদের ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেটসহ ইউনিসেফের সম্মাননা স্মারক দেওয়া হবে।

আদনান রহমান ২০১৩ সালে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‌‘বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমে ইন্টার্ন-রিপোর্টার হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। একই বছর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) থেকে মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। চার মাসের ইন্টার্নশিপ শেষে দুই বছর ‘বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকম’ এবং ২০১৫ সাল থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন ‘জাগোনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমে’। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে তিনি ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করছেন।

২০১৪ সালে বাংলানিউজ থেকে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুযোগ-সুবিধা, সুখ-দুঃখ নিয়ে প্রতিবেদন করেন আদনান রহমান। এছাড়া ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা, ২০১৭ সালে কক্সবাজার-টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল, ২০১৮ সালে নেপালে বিমান দুর্ঘটনা, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান করে নারী পাচার ও সোনা চোরাচালান নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক ইভেন্ট কাভার করেন তিনি। ২০২১ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটরের টাওয়ার স্থাপন করে বাংলাদেশের তথ্য চুরি, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ, মানবপাচার ও ইয়াবা পাচার নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেন আদনান রহমান। প্রতিবেদনগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচিত হয়।

পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে আদনান রহমান বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব), বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সঙ্গে জড়িত আছেন।

সাংবাদিকতায় পড়াশোনার পাশাপাশি ২০১১ সালে জার্মানির চলচ্চিত্র নির্মাতা ভেইথ হেলমারের সঙ্গে জার্মান-বাংলা প্রোডাকশন শর্ট ফিল্ম ‘ডিঙ্গি’তে ‘কাস্টিং ডিরেক্টর-চাইল্ড’ হিসেবে কাজ করেছেন আদনান রহমান। কাজ করেছেন ২০১১-১২ সালে চট্টগ্রামের ‘হালদা নদী’ এবং ‘শেয়ার বাজার ধসের ওপর নির্মিত একটি ডকুমেন্টারিতে। ২০১২ সালে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বেস্ট আইডিয়া মেকার’ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি।

ঢাকা পোস্টের আরেক বিজয়ী জসীম উদ্দীনের বাড়ি গাইবান্ধায়। গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাসের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন তিনি। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির আগ্রহ থেকে ২০০৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি তার। গাইবান্ধার স্থানীয় দৈনিক ঘাঘট, জাতীয় দৈনিক মানবজমিন ও আমাদের কণ্ঠ পত্রিকার রাবি প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। পাশাপাশি বাংলাদেশ বেতার, রাজশাহীতে অনুলিপিকর পদে কাজ করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (রাবিসাস) সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন জসীম উদ্দীন।

ঢাকায় দৈনিক মানবজমিন, টাইমনিউজবিডি, জাগোনিউজটুয়েন্টিফোর ডটকম-এ নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বর থেকে তিনি ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করছেন।

পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে জসীম উদ্দীন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব), রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতি (আরডিজে), রংপুর বিভাগ রিপোর্টার্স ফোরাম (আরডিআরএফ), মেরিন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত আছেন।

এআর/ওএফ/জেএস